আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

হুমায়ূন আহমেদ: বাংলা সাহিত্যের এক অমর কণ্ঠস্বর

আদনান আহমেদ রিফাত

হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অগ্রগণ্য নাম। তাঁর সৃষ্টির মধ্যে আছেন জীবনের নানা দিক, মানুষের মনের গভীরতা এবং অনুভূতির অসীম বিস্তৃতি। সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র, রেডিও, টেলিভিশন—প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান বাংলা সংস্কৃতিতে চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করা হুমায়ূন আহমেদ বাঙালি পাঠকপ্রেমীদের কাছে রোমান্টিকতা, হাস্যরস, মানবিকতা ও মিথের মিশ্রণ হিসেবে পরিচিত।হুমায়ূন আহমেদের লেখনী শুধুমাত্র সাহিত্যিক ক্ষেত্রেই নয়, তার মানসিক বিশ্লেষণ, চরিত্রচিত্রণ এবং সৃজনশীল ভাবনায় পৃথিবীকে দেখার এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। তাঁর জীবনের এই দিনে, তাঁর সাহিত্যিক অবদানের মূল্যায়ন ও চর্চা করা বাংলা সাহিত্যের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সম্মানের অঙ্গীকার।হুমায়ূন আহমেদের শৈশব কাটে সিলেটের নানাবাড়ি এবং পরে নেত্রকোণায় তাঁর বাবার সঙ্গে। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সরকারী কর্মকর্তা এবং মা ছিলেন গৃহিণী। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর শৈশবকালীন সময়টাতে বেশিরভাগ সময়েই তাঁর মায়ের কাছ থেকে গল্প শুনে বেড়ে উঠেছিলেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর জীবনের প্রভাব পড়েছে তার সাহিত্যকর্মে। সিলেট ও নেত্রকোণায় বেড়ে ওঠা হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর আগ্রহ ও ভালোবাসা জন্মানোর সেরা পরিবেশ পেয়েছিলেন।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কিছুদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, কিন্তু সাহিত্য চর্চায় তিনি আরও বেশি মনোযোগী হন। তারপর তিনি আমেরিকা থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।তার সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধকে উপস্থাপন করেছেন অনন্য এক ভঙ্গিতে।হুমায়ূন আহমেদ তাঁর সাহিত্যিক জীবনের শুরু করেছিলেন ১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস “নন্দিত নরকে” দিয়ে। এটি ছিল একটি অন্তরঙ্গ কাহিনী, যা মানব সম্পর্ক এবং সামাজিক মানসিকতার একটি সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ ছিল। তবে তার খ্যাতি আরও বিস্তৃত হয় ১৯৭৩ সালে “শঙ্খনীল কারাগার” উপন্যাসের মাধ্যমে। এই উপন্যাসটি বিপ্লবী এবং সামগ্রিকভাবে সামাজিকভাবে সচেতন পাঠকদের কাছে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে।হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল চরিত্রগুলির গভীরতা এবং জীবনের প্রতিটি শেডকে তুলে ধরা। তাঁর উপন্যাসে যেখানে একদিকে জীবনযাপন এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা ফুটে উঠেছে, সেখানে অপরদিকে ছিল ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক অবস্থান, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, পারিবারিক পরিস্থিতি এবং তাদের সঙ্গতিপূর্ণ মানসিকতা।তাঁর উপন্যাসে সময়ের অঙ্গনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা বা চরিত্রগুলো এমনভাবে উঠে আসে, যেগুলো সাধারণভাবে হয়তো গুরুত্ব পেতো না, কিন্তু তিনি তার ভাষায় একে অনন্য রূপ দিয়েছেন। “মধ্যরাতের মেয়ে”, “দ্বীপ”, “বিষন্নতার নদী”, “মাঝির চর”, “ক্যামেলিয়া”, “লালসবুজ”—এই সব উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদ একেবারে মানবিক অনুভূতি ও চেতনার দিকগুলিকে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন।হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিতে আরেকটি বিশেষ অংশ ছিল তার নাটক এবং চলচ্চিত্র। ১৯৮০ সালের দশক থেকে তাঁর লেখা টেলিভিশন নাটকগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে। তাঁর প্রিয় নাটকগুলোর মধ্যে “তিন দুষ্টু মেয়ে”,“অ্যাডভেঞ্চার”, “কোথাও কেউ নেই”,“বিষন্নতার নদী”, এবং “নদীর নাম মধু” অন্যতম। এর মধ্যে “কোথাও কেউ নেই” ছিল টেলিভিশনের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় একটি নাটক, যা দর্শকদের হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা করে নেয়।

এছাড়া, হুমায়ূন আহমেদ চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন। তার পরিচালিত চলচ্চিত্র “আগুন”, “শ্রাবণ মেঘের দিন”, “গহীনের শব্দ” এবং “দারুচিনি দ্বীপ” দর্শক মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। সিনেমার মাধ্যমে তিনি মানবিক সম্পর্ক, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে তুলে ধরেছেন।হুমায়ূন আহমেদ কখনোই রক্ষণশীল বা একরোখা ছিলেন না। তার সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে ধর্ম, প্রেম, দার্শনিকতা, এবং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের মিশ্রণ ছিল। তার লেখায় ফুটে উঠেছে একধরনের আধ্যাত্মিকতা, যে আধ্যাত্মিকতার মধ্যে তিনি সমাজ, মানবতা ও নিজস্ব চেতনার একটি পরিমাপ রেখেছিলেন।ভিন্নধর্মী সুন্দর সব চরিত্র সৃষ্টি করে, তিনি পাঠকদের চিত্তাকর্ষক ভঙ্গিতে জীবনের রূপবর্ণনা করেছেন। তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে থাকা মানবিকতা, দুর্বলতা, প্রেম, বিরহ, আনন্দ, বিষাদ—সবকিছুই একে একে উঠে এসেছে।এখনো রাস্তায় মাঝে মাঝে হলুদ পাঞ্জাবি পড়া হিমুদের দেখা যায়।হিমু মিসির আলীর মত চরিত্রগুলো এভারগ্রীন। হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একজন সাহিত্যিক, যে সাহিত্য নিয়ে কোনও না কোনও সময় নিজেদের জীবন সংশোধন করতে চেয়েছিলেন।হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে এক ধরনের বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তার লেখার ঢং ছিল অত্যন্ত সহজ, সরল এবং প্রাঞ্জল। পাঠক সাধারণ হলেও তিনি কঠিন সমাজ ও মনস্তত্ত্বের বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করতেন, যা পাঠকদের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলত। তার গল্পের মধ্যে ছিল আনন্দ, কষ্ট, সুখ, দুঃখের মিশ্রণ। তবে হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল তার সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মানবিক গুণাবলী। তিনি কখনোই পাঠককে শুধুমাত্র মেধার জালে আটকে রাখতেন না, বরং তাদের মনের গভীরে পৌঁছে যেতেন। হুমায়ূন আহমেদ ২০১২ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পরপারে পাড়ি জমান, কিন্তু তার সাহিত্যিক অবদান আজও বাঙালি সমাজে অমর হয়ে আছে। তিনি বাংলা সাহিত্যকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছেন, যে সাহিত্য তার অনন্য উপস্থাপনার মাধ্যমে পাঠককে না শুধুমাত্র মুগ্ধ করেছিল, বরং তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে সমাজের প্রতি, ব্যক্তিত্বের প্রতি, এবং মানবিক সম্পর্কের প্রতি। মৃত্যুর পরও তাঁর বই, নাটক, চলচ্চিত্র, এবং স্মৃতিচারণ পাঠকদের মাঝে জীবন্ত হয়ে রয়ে গেছে।হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন এক মহা প্রতিভাবান সাহিত্যিক এবং সৃষ্টিশীল ব্যক্তি। তার সাহিত্যিক জীবনের সঙ্গে এক যুগের পরিচয় ছিল, এবং এই যুগের বাংলা সাহিত্যকে তিনি এক নতুন আলোর দিকে পরিচালিত করেছিলেন। তার লেখা, নাটক এবং চলচ্চিত্রগুলি আজও বাংলা সাহিত্যকে চিরকাল সমৃদ্ধ করে রেখেছে। হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যিক প্রয়াণে এক যুগের অবসান হলেও তার সৃষ্টি চিরকাল বাঙালি মননে বিরাজ করবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।


চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গাঙ্গেয় বদ্বীপের সংগীত ব্যক্তিত্ব যোগী স্বপন কুমার দাশ’র রচিত আধ্যাত্মিক ও দেহতত্ত্ব বিষয়ক গান নিয়ে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাংবাদিক কিরন শর্মার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলক ও প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম এর পরিচালক মো.মাহফুজুল হক। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর প্রখ্যাত সাধক শ্রীমৎ স্বামী সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী’জীকে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ‘খুঁজি তাঁরে’ অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র ঘোষ (যুদ্ধকালিন কমান্ডার), আব্দুর রহিম (লোক ও মরমি শিল্পী), রূপম ভট্টাচার্য (সাংবাদিক), স ম জিয়াউর রহমান(সাংবাদিক), দিদারুল ইসলাম (সংগীত পরিচালক ও কন্ঠ শিল্পী), তন্দ্রা দাশগুপ্তা, সংগীত শিল্পী সঞ্জয় রক্ষিত সহ প্রমুখ। সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত

ছিলেন পাপিয়া আহমেদ (সংগীত প্রযোজক বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম), অপু বর্মন (সংগীত শিল্পী বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন এবং সংগীত শিক্ষক জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রাম), অপু সেনগুপ্ত (বিশিষ্ট গীতিকার বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন), দীপ্ত দত্ত সংগীত শিল্পী (বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন)।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন, খ্যাতনামা মরমি কন্ঠ শিল্পী শিমুল শীল, বাউল শিল্পী বাবুল শীল, অভিষেক দাশ, বাউল জুয়েল দ্বীপ, শিউলী চৌধুরী, আনন্দ প্রকৃতি(মো:তৌহিদুল ইসলাম), আধাত্মিক শিল্পী সুরনাথ, কাওয়ালী শিল্পী মেঘলা। ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি প্রতিযোগিতার সেরা কন্ঠ শিল্পী বাঁধন ঘোষ, ইন্দ্রিলা ঘরজা, মিম দাশ, অধরা চৌধুরী রাত্রি, আরাধ্যা মজুমদার, সৈয়দ রাসতিন, অরূপ কুমার শীল, ঊর্মি নাগ সংগীত পরিবেশন করেন।

যন্ত্র সংগীত শিল্পীতে ছিলেন- কীবোর্ডে রুবেল ঘোষ, অক্টোপ্যাডে পাপন, তবলায় উৎস, বাংলা ঢোলে হৃদয় বাঁশিতে নিলয়। সংগীত তত্বাবধানে যোগী স্বপন কুমার দাশ, অনুষ্ঠান তত্বাবধানে মো: মোহসীন(সাধারণ সম্পাদক, ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি সংসদ)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মো: সাইফুর রহমান ও ববিতা ইসলাম।

আজ বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি নাসির আহমেদ এর ৭৩ তম জন্মদিন ।। 💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️


আজ (৫ ডিসেম্বর ২০২৫) একাত্তরের পদাবলী, তোমার জন্য অনিন্দিতা, বৃক্ষমঙ্গলের কবি নাসির আহমেদ এর ৭৩ তম জন্মদিন। কবির জন্মভূমি দ্বীপজেলা ভোলায় আজ যথাযথ আয়োজনে দিনটি উদযাপন করবে – জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলা এবং জলসিঁড়ি সাহিত্য আসর ।


ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি গ্রামের হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে আজ বিকেল ৪ টায় “কবি নাসির আহমেদের জীবন ও সাহিত্য” শীর্ষক এক মূল্যবান আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ ও কবিতার গান অনুষ্ঠিত হবে ।

অনন্য এই আয়োজনটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন- ভোলা জেলা কালচারাল অফিসার জনাব হাসানুর রশিদ মাসুদ । কবি নাসির আহমেদ এর জীবন ও সাহিত্য শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন- জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাধারণ সম্পাদক ও জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের নির্বাহী সভাপতি সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান । স্বাগত বক্তব্য রাখবেন- জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সহ-সভাপতি কবি মিলি বসাক ।


সভাপতিত্ব করবেন- জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সভাপতি ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সিনিয়র সহ-সভাপতি শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন- জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক কবি মহিউদ্দিন মহিন । কবি নাসির আহমেদ কে নিয়ে কথা বলবেন ও কবিতা পাঠ করবেন- জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি আল মনির, কবি গবেষক নীহার মোশারফ, জলসিড়ির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি, জলসিঁড়ির কোষাধ্যক্ষ কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ, নির্বাহী সদস্য কবি চৌধুরী সাব্বির আলম , কবি কামরুন্নাহার , কবি মাহে আলম আখন প্রমুখ ।

❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ