আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

স্কুল ছাত্রকে অস্ত্রসহ আটক, দেশজুড়ে সমালোচনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের টেকনাফে ১৪ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রকে অস্ত্রসহ আটক করার দাবি করেছে পুলিশ। বুধবার (২৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার হ্নীলা দরগাহ পাড়া থেকে তাকে আটক করা হয়। যদিও শিশুর পরিবারের দাবি শিশু থেকে কোন অস্ত্র পাওয়া যায়নি। অন্যের অস্ত্র শিশুর নামে দেখিয়ে তাকে আটক দেখানো হয়। শিশুকে অস্ত্রসহ আটকের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা চলছে।

আটক হওয়া স্কুলছাত্রের নাম তৌসিফুল করিম রাফি। আমাদের হাতে আসা জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৪ বছর। যদিও পুলিশ উল্লেখ করেছে ১৬ বছর। সে হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। তার বাবা রেজাউল করিম হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।

এদিকে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছে রাফির পরিবার। আমাদের হাতে আসা রাফির বাবা রেজাউল করিমের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমাদের বাড়িতে পুলিশ কিছু না পেয়ে আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে ভয়ভীতি দেখায়। তারপর আমার ছেলেকে গুলি করার হুমকি দিয়ে স্থানীয় মো. সেলিমসহ কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মিলে অস্ত্র দিয়ে গ্রেফতার দেখিয়েছে।’

মামলার এক নং সাক্ষী মাওলানা জামাল হোসেনের দাবি, তাকে মসজিদে যাওয়ার পথে আটকে একটি ঘরে ডুকিয়ে জোর পূর্বক সাক্ষী বানায়। তিনি এই শিশুর হাতে অস্ত্র দেখেন নি।

মামলার দুই নং সাক্ষী সুফাইদা আক্তারের বলেছেন, পুলিশ তার বাড়ি থেকে অস্ত্র পেয়েছে দাবি করেছেন এবং পরবর্তীতে এই শিশুকে নিজের বাড়ি থেকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে এবং অস্ত্র তার বলে ভিডিও স্টেটমন্টে নেন।

হ্নীলা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মাদ রায়হান তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন, রাফি অসম্ভব মেধাবী । ২০২২ সালে গুলফরাজ হাশেম ফাউন্ডেশন বৃত্তি পরীক্ষায় সাধারণ বৃত্তি লাভ করে। এবছর সপ্তম শ্রেণিতে প্রতিভার আলো, ড.গাজী কামরুল ইসলাম মেধা বৃত্তি এবং হ্নীলা একাডেমি বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতো। আমার কাছে প্রাইভেটে পড়ে। গতকাল সবাই বার্ষিক পরীক্ষা দিলো, রাফি ছাড়া। আমার ছাত্রের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং অনতিবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি চাই। প্রতিহিংসার নোংরা রাজনীতি একটা মেধাবী ছেলের জীবন তছনছ করে দিলো।

হ্নীলা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ সোহেল এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে লিখেন, ‘তাওসীফুল করিম রাফি ছাত্র হিসেবে খুবই মেধাবী। একটু শ্যায় টাইপের। বড়দের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। মুখে অলওয়েজ হাসিঁ থাকে। সবে মাত্র কৈশোরে পা দিল। তার সাথে এটা বড় অবিচার হয়ে গেল। জানি না কিভাবে সে এই ট্রমা কাটিয়ে উঠবে। রাফির নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি ।’

বিষয়টি নিয়ে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গিয়াস উদ্দিন টিটিএন-কে জানান, বুধবার রাতে অভিযান চলাকালীন পুলিশ দেখে ২ জন পালিয়ে যেতে চাইলে রাফিকে ধরে ফেলে তারা। তারপর তার ডান হাতে থাকা নীল রঙের শপিং ব্যাগ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি এবং ৪০ রাউন্ড শটগানের গুলি উদ্ধার করার দাবি করেন ওসি।

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আমাদের কাউকে হয়রানি করার কোন উদ্দেশ্য নেই। একজন শিশুর সাথে তো আমাদের কোন শত্রুতা থাকতে পারে না। তার বাবা তাকে দিয়ে অস্ত্রটা বহন করিয়েছে। যেটা জেনুইন ঘটনা সেটাই আমরা করেছি। রাফি বিষয়টি আমাদের কাছে স্বীকার করেছে যে, তার বাবা তাকে দিয়ে বহন করিয়েছে। নিরীহ মানুষ কোনদিন আমাদের কাছে হয়রানির স্বীকার হবে না।

ওসি আরও জানান, মুলত শিশু রাফির বাবা রেজাউল করিম চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ইয়াবাকারবারের সাথে জড়িত। যার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা রয়েছে। এলাকায় এটা সবাই জানে। সন্ত্রাসী কাজের জন্য লাইসেন্সবিহীন এই অস্ত্র মজুদ করেছিল।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ভোলায় জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত ।

দ্বীপজেলা ভোলার আধুনিক সাহিত্য সংগঠন জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে ।গতকাল ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে অনুষ্ঠিত জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম এর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান, জাতীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট ভোলা জেলা শাখার সদস্য সচিব প্রভাষক কবি মিলি বসাক, জলসিঁড়ির সদস্য সচিব কবি মহিউদ্দিন মহিন, জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জলসিঁড়ির সংগঠক কবি নীহার মোশারফ, আবৃত্তিশিল্পী সমাজসেবক মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ ।

সভায় উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম কে সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সাংবাদিক কবি রিপন শানকে নির্বাহী সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সংগঠক মহিউদ্দিন মহিনকে সাধারণ সম্পাদক, কবি গবেষক কবি নীহার মোশারফ কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫- ২০২৭ গঠন করা হয়েছে ।

কমিটির সহ-সভাপতিগণ হচ্ছেন- সিনিয়র প্রভাষক কবি মিলি বসাক, কবি মোঃ জুলফিকার আলী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণ হচ্ছেন- কবি আল মনির, আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি । অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাংবাদিক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ । নির্বাহী সদস্যগণ হচ্ছেন- অধ্যক্ষ কবি এম এস জালাল বিল্লাহ, কবি দিলরুবা জ্যাসমিন, কবি চৌধুরী সাব্বির আলম এবং কবি এরশাদ সোহেল ।

আসছে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার বিকেল ৪ টায় ভোলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য জলসিঁড়ির মাসিক সাহিত্য সভায় নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ