আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

নানান সমস্যায় লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতাল

সাহিদ বাদশা বাবু , লালমনিরহাট ::

রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় রোগীদের ভিড়ে একসময় মুখরিত থাকতো রেলওয়ে হাসপাতাল লালমনিরহাট।কিন্তু এখন অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় এই হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার নেই কোন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি । ওষুধ থাকলেও তার সুবিধা তেমন পাননা রোগীরা। চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মরত পদ সংকটসহ নানান কারণে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে ইন্ডোর চিকিৎসাসেবা বন্ধের উপক্রম হয়ে আছে। আউটডোর ও জরুরি চিকিৎসাসেবা চালু থাকলেও সেটি নামেমাত্র।

জানা যায়, এখানে সপ্তাহে সামান্য কিছু রোগী হাসপাতালটির বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন, আর ইনডোরের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ৩২ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে দুই -এক জন রোগী ভর্তি হন মাঝেমধ্যে।রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়রা জানায়, লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে তাদের এই হাসপাতালের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির জন্য চিকৎসক ও জনবল সংকটকে দায়ী করেছেন তাঁরা । এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে জনস্বার্থে হাসপাতালের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী (৫৪) বলেন,
হাসপাতালের ভেতরে অধিকাংশ দরজা তালাবদ্ধ থাকে। মাঝে মাঝে খোলা হলেও হাসপাতালে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।হঠাৎ কখনো তালা খোলা থাকলেও
ভেতরে গিয়ে দেখা যায় মাঠে গরু-ছাগল চড়ানো হচ্ছে। হাসপাতালের ভেতরের অধিকাংশ দরজায় তালা ঝুলানোর কারণে ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালটি সঠিক নিয়মে না চলার কারণে এলাকার লোকজন অনেক বার প্রতিবাদ করলেও তেমন কোন লাভ হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৩২ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে নারীদের জন্য ১০টি ও পুরুষদের জন্য ২০টি বেড রয়েছে সেই সাথে কর্মকর্তাদের জন্য ২টি বেড রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ১ জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স রয়েছে ১ জন ও অন্যান্য কর্মচারী রয়েছে ৩ জন। হাসপাতালে
নেই একজন রোগীও।কর্মরত নার্সের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় , হাসপাতালে বর্তমানে একজন রোগী ভর্তি রয়েছে তাও আবার তিনি নিজ বাড়ি থেকে এসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই হাসপাতালের ভবনের ছাদ ও ওয়ালে ফাটল ধরেছে, জানালা-দরজার অবস্থা তেমন ভালো না।পাকা ছাদ বিধ্বস্ত, ইটের ফাঁকে ফাঁকে আগাছায় ভর্তি, এগুলো যেন দেখার কেউ নেই। হাসপাতালের ভবনের ভেতরে বা বাইরের পাশ দিয়ে চলতে গেলেও গা শিউরে ওঠে। দেখে মনে হয় ভুতুড়ে বাড়ি।্পরিত্যক্ত ও বিধ্বস্ত মেডিকেল ভবনে অনেকটাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কয়েকজন কে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য বসে থাকতে দেখে গেছে । শুধুমাত্র রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষন ও গুরুত্বের অভাবে মেডিকেল সেক্টরটির এমন অবস্থা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।মূলত ডিভিশনাল মেডিক্যাল অফিসার এর কার্যালয় লালমনিরহাট থেকে ৪ টি কেন্দ্র পরিচালিত হয়। লালমনিরহাট , তিস্তামুখঘাট, বোনারপাড়া, পার্বতীপুর।লালমনিরহাট ডিভিশনাল মেডিক্যাল অফিসার কার্যালয়ের তথ্য মতে

বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল লালমনিরহাটে সরকারি মঞ্জুরী আদেশ (জিও) অনুযায়ী মঞ্জুরীকৃত পদ, কর্মরত পদ এবং শূন্য পদের সংখ্যাগুলো হলো:চিকিৎসক ১ম শ্রেণী : মঞ্জুরীকৃত পদে রয়েছে ১০ টি, কর্মরত পদে রয়েছে ১ জন, শূন্য পদে সংখ্যা ৯ জন।২ম শ্রেণী : মঞ্জুরীকৃত পদে রয়েছে ২৫ জন, কর্মরত পদে রয়েছে ১০ জন, শূন্য পদে সংখ্যা ১৫ জন।৩ম শ্রেণী : মঞ্জুরীকৃত পদে রয়েছে ১৪ জন, কর্মরত পদে রয়েছে (শূন্য) জন, শূন্য পদে সংখ্যা ১৪ জন।৪ম শ্রেণী : মঞ্জুরীকৃত পদে রয়েছে ১৮৫ জন, কর্মরত পদে রয়েছে ৭০ জন, শূন্য পদে সংখ্যা ১১৫ জন।২৩৪টি পদের মধ্যে বর্তমানে ৮১টি পদে লোকবল কর্মরত রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ১৫৩টি পদই শূন্য রয়েছে যার ফলে চিকিৎসা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল, লালমনিরহাট কেন্দ্রের বিভাগীয় চিকিৎসক কর্মকর্তা মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা একটি, কর্মরত পদের সংখ্যা শূন্য এবং শূন্য পদের সংখ্যা একটি। সহকারী সার্জন মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা : ৩ টি,কর্মরত পদের সংখ্যা একটি এবং শূন্য পদের সংখ্যা ২ টি।লালমনিরহাট কেন্দ্রের সিনিয়র স্টাফ নার্সরোকসানা বেগম (৪৫) বলেন, মেডিকেলটি সচল থাকা অবস্থায় রোগী প্রচুর আসতো।এখন চিকিৎসক নেই, তাই রোগীও আসে না। অথচ যত জায়গা আছে তাতে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করা সম্ভব। এটি সচল করা গেলে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি এ জেলার হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হবে। হাসপাতালটিকে সচল করতে সরকারের কাছে দাবিও জানান তিনি ।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেডিওগ্রাফীতে
কর্মরত হুমায়ুন কবির(৪০) বলেন, যখন মেডিকেলের কার্যক্রম ভালো ছিলো ঠিক সেই সময় অধিকাংশ রোগী ওষুধের জন্য ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আসতেন।
বর্তমানে ইনডোরের চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে। বলতে গেলে রোগীই ভর্তি থাকে না। এজন্য হাসপাতালটিতে কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নতুন করে আবারো ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি আধুনিকায়ন করাপ্রয়োজনম বাংলাদেশ রেলওয়ে,লালমনিরহাট ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাহফুজ ইফতেখার ভূঞা বলেন, এ হাসপাতালটির বৃটিশ আমলের মঞ্জুরিকৃত পদগুলো ঢেলে সাজানো দরকার। এতে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার যে মূল লক্ষ্য তা বস্তাবায়ন হবে। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত। এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে জনস্বার্থে হাসপাতালের সমস্যাগুলো সমাধানে জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাটেরডিভিশনাল ম্যানেজার মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, জনবল বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল পেলে হাসপাতালটি সচল হয়ে উঠবে। স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিত করতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুদিনের মধ্যেই জনবল সংকট ও বর্তমান সমস্যা গুলো সমাধানের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখবেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

মশা নিধনে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহার শুরু চসিকের।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রথমবারের মতো মশা নিয়ন্ত্রণে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু করেছে। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্দেশক্রমে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মো. আশরাফুল আমিন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ শরফুল ইসলাম মাহি, কীটতত্ত্ববিদ রাশেদ চৌধুরী এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মশা নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর আগে গত ২৬ মার্চ নগরীর ১৭ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ডের সৈয়দ শাহ রোডের সামনের খালে পরীক্ষামূলকভাবে বিটিআই লার্ভিসাইড প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে আজ থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিটিআই প্রয়োগ শুরু করল চসিক।

চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ফগিং, লার্ভিসাইড ছিটানো, নালা–নর্দমা পরিষ্কার, আবর্জনা অপসারণ এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের আমেরিকান প্রযুক্তির বিটিআই ব্যবহারে মশার লার্ভা ধ্বংসে আরও কার্যকর ফল পাওয়া যাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

বিটিআই হলো একটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়াভিত্তিক লার্ভিসাইড, যা বিশেষভাবে মশা, ব্ল্যাক ফ্লাই ও ফাঙ্গাস গ্ন্যাটের লার্ভা দমনে ব্যবহৃত হয়। এটি পানিতে প্রয়োগ করার পর লার্ভা খাদ্যের সঙ্গে বিটিআই গ্রহণ করে এবং ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদিত ক্রিস্টাল প্রোটিন টক্সিন লার্ভার পরিপাকতন্ত্রে কার্যকর হয়ে তাদের দ্রুত নিধন ঘটায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিটিআই মানুষের শরীর, গৃহপালিত প্রাণী, মাছসহ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর নয়; এমনকি উদ্ভিদ ও জলজ বাস্তুতন্ত্রেও কোনো বিষাক্ত প্রভাব ফেলে না। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়ার মতো বাহক–বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি নিরাপদ ও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

অধস্তন আদালতও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন।

অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করণের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম বিভাগ। ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রাম ই ফ্যামিলি কোর্ট উদ্বোধন করতে এলে আইন সচিব লিয়াকত আলী মোল্লাএর সাথে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন,

চট্টগ্রাম বিভাগ ও চট্টগ্রাম জজশীপ কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ এর নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎকালে তাদের দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান।তারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় এর ন্যায় পদ -পদবী পরিবর্তন ও বেতন স্কেল নির্ধারণের ও দাবি জানান।নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ বিচার বিভাগ আইনের ধারক ও বাহক।
Pp

কিন্তু অধস্তন আদালতের কর্মকর্তাও কর্মচারীগন বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই বৈষম্য দূরীকরণের জোর দাবি জানান।আইন সচিব অবিলম্বে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা জজ মোহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন, মহানগর দায়রা জজমোঃ হাসানুুল ইসলামও চট্টগ্রামের সকল স্তরের বিচারক মন্ডলী।উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এনামুল হক আকন্দ ।বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন পারভেজ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাং শামসুল হক, , চট্টগ্রাম জজশীপ কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ এর সভাপতি বিপ্লব কান্তি দাশ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ