আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

জেনারেল হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ শয্যার ২২টি ভেন্টিলেটরের ২০টি অকার্যকর

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের স্বার্থে ২০২০ সালে ১৮টি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়। রোগীদের চাপও ছিল শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এই ১৮টি শয্যার জন্য ২২টি ভেন্টিলেটর থাকলেও বর্তমানে ২০টিই অকার্যকর। বাকি দুটি সচল থাকলেও কর্মক্ষমতা কমে গেছে। যার কারণে প্রতিটি ভেন্টিলেটর ২৪ ঘণ্টা পরপর পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করতে হয়।

করোনাকালীন মুমূর্ষু রোগীদের নির্বিঘ্নে সেবায় কমতি ছিল না। চিকিৎসক থেকে শুরু করে অন্যান্য জনবলও আনা হয় বিভিন্ন স্থান থেকে। কিন্তু মহামারির পর থেকে সেই আইসিইউ ওয়ার্ড এখন অনেকটাই রোগী শূন্য। শয্যা থাকলেও নেই মুমূর্ষু রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভেন্টিলেটর। অন্যান্য যন্ত্রপাতিরও আছে অভাব। রোগীদের চিকিৎসা যারা দিবেন, সেই চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরও সংকট প্রকট। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে আইসিইউ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকটাই টেনেটুনে সেবা দিতে হচ্ছে তাদের। আইসিইউর পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় এখন এইচডিইউ সেবা দিয়েই দিন পার করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আইসিইউ বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মৌমিতা দাশ বলেন, কোভিডের সময় আইসিইউগুলো স্থাপন করা হয়। তখন পর্যাপ্ত চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য জনবল ছিল। কিন্তু এখন মাত্র দুই জন মেডিকেল অফিসার আছে। সংযুক্তিতে যারা ছিলেন, তারাও এখন নেই। জনবলের খুব সংকট। ১৮টি ভেন্টিলেটর অকার্যকর। মাত্র দুটি ভেন্টিলেটর কার্যকর আছে। তাও ২৪ ঘণ্টা পরপর পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করতে হয়। প্রয়োজনীয় সবগুলো যন্ত্রপাতিরও সংকট আছে। সবমিলিয়ে কোনভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এখন অনেকটাই এইচডিইউর মতোই সেবা চলছে। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মান্নান বলেন, হাসপাতালে যোগদানের পর আইসিইউ’র যন্ত্রাংশসহ জনবল ও অবকাঠামোগত যে সমস্যা, তা দেখতে পাই। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি আমি নিজেও গত নভেম্বর লিখিত আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। একটি আইসিইউ চলতে হলে অবকাঠামো থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার। আশা করছি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
জানা গেছে, করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর হাসপাতালটিতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের জন্য কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রোগীদের স্বার্থে ২০২০ সালে ১৮টি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়। ওই সময় আইসিইউ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহায়ক স্টাফকে সংযুক্তিতে হাসপাতালে পদায়ন করা হয়। কিন্তু সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সব সংযুক্তি বাতিল করা হয়। যার কারণে আইসিইউ শয্যা পরিচালনার মতো বর্তমানে প্রয়োজনীয় জনবল নেই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৮টি শয্যার জন্য ২২টি ভেন্টিলেটর থাকলেও বর্তমানে ২০টিই অকার্যকর। বাকি দুটি সচল থাকলেও কর্মক্ষমতা কমে গেছে। যার কারণে প্রতিটি ভেন্টিলেটর ২৪ ঘণ্টা পরপর পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করতে হয়। বাইপ্যাপ মেশিন ৩৩টি থাকলেও ২৮টিই অকার্যকর। হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা ৩৯টির মধ্যে ৩৬টি অকার্যকর। চিকিৎসকদের মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট নেই। জুনিয়র কনসালটেন্ট আছে মাত্র ২ জন। তাও আবার তারা অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে এনেসথেসিয়া বিভাগে কাজ করে থাকেন। মেডিকেল অফিসার আছে মাত্র একজন। কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ডায়ালাইসিসের কোন ব্যবস্থাই নেই। রেসটিরেটরি থেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, নিউট্রিশনিস্ট নেই। অন্যান্য জনবলেরও প্রকট সংকট রয়েছে। যার কারণে সংকটের মধ্যে কোনভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ভোলায় জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত ।

দ্বীপজেলা ভোলার আধুনিক সাহিত্য সংগঠন জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে ।গতকাল ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে অনুষ্ঠিত জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম এর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান, জাতীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট ভোলা জেলা শাখার সদস্য সচিব প্রভাষক কবি মিলি বসাক, জলসিঁড়ির সদস্য সচিব কবি মহিউদ্দিন মহিন, জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জলসিঁড়ির সংগঠক কবি নীহার মোশারফ, আবৃত্তিশিল্পী সমাজসেবক মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ ।

সভায় উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম কে সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সাংবাদিক কবি রিপন শানকে নির্বাহী সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সংগঠক মহিউদ্দিন মহিনকে সাধারণ সম্পাদক, কবি গবেষক কবি নীহার মোশারফ কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫- ২০২৭ গঠন করা হয়েছে ।

কমিটির সহ-সভাপতিগণ হচ্ছেন- সিনিয়র প্রভাষক কবি মিলি বসাক, কবি মোঃ জুলফিকার আলী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণ হচ্ছেন- কবি আল মনির, আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি । অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাংবাদিক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ । নির্বাহী সদস্যগণ হচ্ছেন- অধ্যক্ষ কবি এম এস জালাল বিল্লাহ, কবি দিলরুবা জ্যাসমিন, কবি চৌধুরী সাব্বির আলম এবং কবি এরশাদ সোহেল ।

আসছে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার বিকেল ৪ টায় ভোলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য জলসিঁড়ির মাসিক সাহিত্য সভায় নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ