আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

রূপগঞ্জে সাত বছরের শিশু ধর্ষণের চেষ্টা ৫ হাজার টাকায় ধামাচাপার রফাদফা

মাহাবুবুর রহমান রনি, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)প্রতিনিধি:

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভার রূপসী এলাকায় চকলেট কিনে দেওয়ার প্রলোভনে ইব্রাহিম মিয়া (৫৫) নামের এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী সাত
বছরের শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা রাতে শিশুটির বাবা-মাকে
প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পাঁচ হাজার টাকায বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় ।

বিষয়টি জানাজানি হলে রাত ১১টার দিকে এলাকাবাসী ইব্রাহিম মিয়ার বাসার সামনে বিক্ষোভ করে। অভিযুক্ত ইব্রাহিম সুনামগঞ্জ জেলার বিঞ্চামপুর এলাকার আব্দুল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে তারাবো পৌরস্বেচ্ছাসেবক
লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বাবেলের বড় ভাই রুবেলের বাড়িতে ভাড়ায় থাকে। স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শিশুটির পরিবার রূপসী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে। অভিযুক্ত ইব্রাহিম মিয়া রূপসী
বাগবাড়ি সেতু এলাকায় কাঁচামালের ব্যবসা করে। দুপুরে শিশুটিকে চকলেট কিনে দেওয়ার কথা বলে তার

দোকানে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় প্রতিবেশী এক ব্যক্তির স্ত্রী ইব্রাহিম মিয়ার দোকানে শুঁটকি কিনতে গিয়ে দস্তাদস্তির বিষয়টি সরাসরি দেখে স্থানীয়দের খবর দেন। এলাকাবাসী শিশুর বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়। একপর্যায়ে ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মিলে ধর্ষণের ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা শিশুর পরিবারকে দেওয়ার জন্য ইব্রাহিম মিয়াকে নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে পেরে ইব্রাহিমের বাসার সামনে বিক্ষোভ করে ঘিরে রাখেন।উত্তেজনা বাড়তে দেখে সুযোগমত ইব্রাহিম মিয়া পালিয়ে যায়। এরপর উত্তেজিতএলাকাবাসী ইব্রাহিম মিয়ার বাসা ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাত ১১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) মেহেদী

ইসলাম,রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি পূর্বাচল
রাজস্ব সার্কেল ) ওবায়দুর রহমান সাহেলসহ পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন এ সময় শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়স সাত বছর। আমি
দিন মজুরের কাজ করি। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে আমি কাজ থেকে এসে শুনতে পারি আমার মেয়েকে ইব্রাহিম ধর্ষণ করেছে। আমি এখানে ভাড়া থাকি। বাড়িওয়ালা তানসেন ও রুবেলসহ কয়েকজন মিলে আমাকে চাপ দিয়ে ৫ হাজার টাকা দিবে বলে

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বলেন। আমি মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার চাই।তারা বলেছে যদি কাউকে এ কথা মেয়ে বলে তাহলে তাকে হত্যা করবে বলে হুমকি
দিয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই ।এ ব্যাপারে শিশুর পিতা বাদী হয়ে দর্শনের চেষ্টার অভিযোগ এনে লম্পট ইব্রাহিম মিয়াকে আাসামী করে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন,আমিসহ পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভিকটিমের পরিবারের সাথে কথা হয়েছে। আমরা ঘটনাটা তদন্ত করছি, ফৌজদারি অপরাধের কিছু বিষয় আছে যা কখনোই মীমাংসার যোগ্য নয়, তার মধ্যে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা অন্যতম।যারা মীমাংসার চেষ্টা করেছে তারাও এই অপরাধের সাথে সমানভাবে অপরাধী।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন,
মেয়েটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মেযিেট এখনো সুস্থ্য রয়েছে। ডাক্তারী পরীক্ষার পরে বলা যাবে শিশুটির কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাটি শোনা মাত্রই উপজেলার পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটসহ আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি । কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমরা কাউকে ধরতে পারিনি।
আমরা আশা করছি আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদেরকে ধরতে পারবো।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি লিয়াকত আলী
বলেন, এ ব্যাপরে শিশুটির পিতা বাদী হয়ে ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগ এনে রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগটি মামলা হিসাবে রুজু করা
হয়েছে। তবে চিকিৎকদের প্রতিবিদনের পর শিশুটি ধর্ষনের শিকার নাকি ধর্ষনের চেষ্টার শিকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। ধর্ষনের শিকার হয়ে থাকলে
মামলাটি সে অনুযায়ী রূপান্তরিত হবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ