আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে মুক্তিপণের পর শিশুকে ফেরত দিতে গিয়ে ধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মহানগরীতে মুক্তিপণ আদায় করে শিশুকে ফেরত দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন এক ব্যক্তি। বন্ধুর দুই বছর বয়সী মেয়েকে চুরির ঘটনায় ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটির যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য আট হাজার টাকা মুক্তিপণ পাঠিয়ে প্রথমে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর অভিযান চালিয়ে মূল অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে অবশ্য ঘটনায় জড়িত তার সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। গত শুক্রবার রাতে নগরীর বন্দর থানার নিমতলা এলাকা থেকে শিশু চুরির সঙ্গে জড়িত মূল ব্যক্তি মো. হেলালকে (৩৬) গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি ভোলা জেলায়।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার ভোরে নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে হেলালের সহযোগী ইব্রাহিম রাঢ়িকে (২৫) গ্রেফতার করা হয় বলে বন্দর থানা পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, নগরীর মাইলের মাথা এলাকায় একটি কলোনিতে পোশাককর্মী বিলকিস তিন সন্তান নিয়ে থাকেন। তার দুই ছেলে, এক মেয়ে। এরা হল- শামীম (১৪), রবিউল (৮) ও মেয়ে আয়েশা (২)। বিলকিসের স্বামী ভোলা জেলায় তাদের গ্রামের বাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
হেলালের বাড়িও ভোলা জেলায় একই গ্রামে। বিলকিসের স্বামীর বন্ধু হেলাল। গত বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হেলাল বিলকিসের বাসায় যায়। বিলকিস তখন কারখানায় ছিলেন। বাসায় তিন সন্তানের মধ্যে শামীম বাইরে বের হয়েছিল। রবিউলকে ২০ টাকা দিয়ে দই কিনতে পাঠায় হেলাল। রবিউল বের হওয়ার পর দ্রুত আয়েশা নিয়ে চলে যায় হেলাল। রবিউল বাসায় ফিরে বোনকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তার মাকে জানায়। ওই রাতেই বিলকিস থানায় গিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।
বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কিশোর মজুমদার বলেন, বুধবার ভোর রাত পৌনে ৪টার দিকে বিলকিসের মোবাইলে একটি কল আসে। সেখানে মেয়েকে মুক্তি দেয়ার জন্য এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আমরা ওই মোবাইল নম্বর পর্যালোচনা করে একই নম্বর থেকে ১৪টি কল পাই। সেই কলদাতা ইব্রাহিমকে শনাক্ত করে গত বৃহস্পতিবার ভোরে আমরা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি।
সে জানায়, আয়েশা চুরির সময় সে-ও ছিল, তবে কিছুটা দূরে অবস্থান করছিল। আয়েশাকে বিক্রি না করা পর্যন্ত তার স্ত্রীর হেফাজতে রাখার কথা ছিল। কিন্তু স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় হেলাল শিশুটিকে নিয়ে কর্ণফুলী উপজেলায় চলে যায়।এর মধ্যে আমরা বিলকিসের মাধ্যমে মুক্তিপণের আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকি। শিশুটির যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য আমরা বিকাশে ৮ হাজার টাকা পাঠাই। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে একজন অটোরিকশা চালকের মাধ্যমে শিশুটিকে সল্টগোলা এলাকায় পাঠানো হয়। বিলকিসসহ আমরা শিশুটিকে অক্ষত অবস্থায় গ্রহণ করি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অটোরিকশা চালককে আটক করা হয়। সে জানায়, তাকে ২০০ টাকা দিয়ে এক ব্যক্তি শিশুটিকে মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা বললে সে রাজি হয়েছিল। এসময় আমরা হেলালের ছবি দেখালে অটোরিকশা চালক তাকে শনাক্ত করে।
এসআই কিশোর জানান, শিশুটিকে ফেরত দিলেও হেলাল বারবার স্থান পরিবর্তন করছিল। সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত করে শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে হেলাল জানিয়েছে, তারা দুজন মিলে শিশুটিকে চুরি করে বিক্রির পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ইব্রাহিমের স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এছাড়া শিশুটি মায়ের বুকের দুধ ছাড়া আর কিছু না খাওয়ায় তাকে হেফাজতে রাখা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। শেষমেষ বিক্রির পরিকল্পনা বাদ দিয়ে শিশুর মায়ের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক অটোরিকশা চালক মামলার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ইব্রাহিম কারাগারে আছেন। হেলালকে গতকাল শনিবার আদালতে হাজিরের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে এসআই কিশোর মজুমদার জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ