আজঃ শনিবার ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

সাবেক হুইপ সামশুল অনুসারী চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতাকে ‘বিবস্ত্র করে’ পিটুনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ছাত্রলীগের এক ছাত্রলীগের এক নেতাকে প্রায় বিবস্ত্র করে বেধড়ক পিটুনির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার পটিয়া উপজেলায় ওই ছাত্রলীগ নেতা অভিযোগ করেছেন, পটিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর অনুসারী হওয়ায় তাকে মারধরের শিকার হতে হয়েছে। মারধরকারীরা বর্তমান সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারী বলে তিনি জানান। গত শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নে এ ঘটনার পর রাতের মধ্যে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।মারধরের শিকার আসাদুজ্জামান আসাদের বাড়ি (৩০) কোলাগাঁও ইউনিয়নে। তিনি ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি এবং পটিয়া উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি বলে জানা গেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, স্যান্ডো গেঞ্জি ও পায়জামা পরিহিত আসাদকে প্রকাশ্যে একটি গাছের সঙ্গে লাগিয়ে পেটানো হচ্ছে। তার মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। এসময় তাকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় তাকে মাফ করে দেওয়ার জন্য বলতে শোনা যায়। একপর্যায়ে মারধরকারীদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। চলে যাওয়ার সময় তাকে আবার ধরে বিবস্ত্র করার চেষ্টা চলে।
আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমি পটিয়া পৌরসভায় যাবার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে কোলাগাঁওয়ের টেক থেকে বাসে উঠি। তখন ৪-৫ জন বাস থামিয়ে আমাকে টেনে সেখান থেকে নামিয়ে নেয়। এরপর আমাকে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। প্রথমেই আমার পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলে। এরপর আমাকে বিবস্ত্র করা হয়। সেখানে অনেক লোকজন জড়ো হয়েছিল। সবার সামনে আমাকে বিবস্ত্র করেছে, এটা আমার খুবই খারাপ লাগছে। আমার মাথা ফেটে গেছে, ঠোঁটে, মুখে এবং বুকে আমি মারাত্মক আঘাত পেয়েছি।মারধরকারীরা চলে যাবার পর স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিয়ে যায় এবং তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে পটিয়ায় একের পর এক হামলা, সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে সামশুল হক চৌধুরী ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শেষবার তাকে সংসদের হুইপ করা হয়েছিল।দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তার বদলে দলটি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সামশুল। এর ফলে মোতাহেরুল ও সামশুলের অনুসারীরা মুখোমুখি অবস্থানে পৌঁছে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে নির্বাচনের আগেরদিন পর্যন্ত সামশুলের গণসংযোগে দফায় দফায় হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। সামশুলের পাশাপাশি তার ভাই-বোনও হামলার শিকার হয়ে আহত হন। রক্তক্ষয়ী এসব সংঘাতের জন্য সামশুল আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও তার অনুসারীদের দায়ী করে আসছিলেন।নির্বাচনে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে ধরাশায়ী হন সামশুল হক চৌধুরী।
এদিকে হামলার জন্য কোলাগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বুলবুল হোসেনকে দায়ী করে আসাদ বলেন, আমি সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী সাহেবের অনুসারী। বুলবুল বর্তমান এমপির লোক। সে এলাকায় মাদকের কারবার করে। আমি সবসময় এসবের প্রতিবাদ করি। সে আমাকে আগেও কয়েকবার ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছে। শেষপর্যন্ত আমাকে একা পেয়ে কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে আমার ওপর হামলা করেছে। এরপর আবার তারাই ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। সুস্থ হয়ে আমি মামলা করব।
জানতে চাইলে বুলবুল হোসেন বলেন, যে ভিডিওর কথা বলছেন, সেখানে তো আমি নেই। ঘটনা ঘটেছে ১২টা-সাড়ে ১২টার দিকে। আমি তখন পটিয়ায় এমপি সাহেবের (মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী) সঙ্গে ছিলাম। যতদূর জানি, ঘটনা হয়েছে কোলাগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আবু হানিফের সঙ্গে। এখানে আমাকে জড়ানো হচ্ছে কেন, বুঝতে পারছি না।
আবু হানিফ বলেন, রোজার মাঝামাঝিতে আসাদ আমাদের ছাত্রলীগের ছোট ভাই জোবায়েরের কাছ থেকে আট হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল নেয়। ছয় হাজার টাকা পরিশোধ করে। বাকি দুই হাজার টাকা ঈদের আগের রাতে দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেয়নি। জোবায়ের গত শুক্রবার সকালে আসাদের বাড়িতে গিয়ে তার কাছে টাকা দাবি করে। তখন আসাদসহ কয়েকজন মিলে জোবায়েরকে মারধর করে।
জোবায়ের একথা আমাদের জানায়। কিছুক্ষণ পর আসাদকে আমরা কোলাগাঁও টেকে দেখে জিজ্ঞেস করি। তখন সে আমাদের উল্টাপাল্টা কথা বলতে থাকে। তখন তার সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। ভিডিও কে করেছে, সেটা আমরা জানি না। জোবায়ের তাকে মারধরের জন্য থানায় অভিযোগ করেছে। তবে জোবায়েরের সঙ্গে মোবাইল নিয়ে মনোমালিন্য ও তাকে মারধরের ঘটনা সত্য নয় বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ।
এ বিষয়ে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, জোবায়ের নামে এক ছেলে তার মারধরের একটি অভিযোগ দিয়েছে। সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। এর মধ্যে এক ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের একটি ভিডিও আমরা দেখেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। আমরা সেটাও তদন্ত করে দেখছি যে, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

ইরান ওমান উপসাগরে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ইরান ওমান উপসাগরে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে । তেলবাহী জাহাজটিতে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার ১৮ নাবিক রয়েছে। ইরানি গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়- ছয় মিলিয়ন লিটার চোরাচালানকৃত ডিজেল বহনকারী একটি তেলবাহী জাহাজ ওমান উপকূলে আটক করা হয়েছে।

চন্দ্রগঞ্জ থানা পরিদর্শন করেন নবাগত পুলিশ সুপার মো:আবু তারেক

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

লক্ষ্মীপুর জেলার সদ্য যোগদান করা পুলিশ সুপার জেলার বিভিন্ন থানা পরিদর্শন ও থানায় কর্মরত অফিসারদের সাথে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা আকস্মিক পরিদর্শন করেন লক্ষ্মীপুর জেলার নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ আবু তারেক। এসময় চন্দ্রগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ও কর্মরত সবাই ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

থানা পরিদর্শনকালে পুলিশ সুপার ফোর্সদের থাকার ব্যারাক ও বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন এবং সকল পুলিশ সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এছাড়াও সকল পুলিশ সদস্যদের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।

উল্লেখ্য চন্দ্রগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোরশেদ আলম চলতি মাসের ৬ তারিখে এ থানায় যোগদান করেন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ