আজঃ শনিবার ১৭ মে, ২০২৫

চট্টগ্রামে তীব্র তাপপ্রবাহে নগরজীবনে নাভিশ্বাস

রোগব্যাধি বাড়ায় হাসপাতালে চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মহানগরে তীব্র তাপপ্রবাহে নাভিশ্বাস তৈরি হয়েছে। অতিরিক্ত গরমে নানা রোগব্যাধিতেও আক্রান্ত হচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন বয়সী লোকজন। তীব্র গরমে শরীর থেকে প্রচুর লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে শিশুদের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়ে পানিশূন্যতা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত গরমে টাইফয়েড, পানিবাহিত হেপাটাইটিস বা জন্ডিসের প্রবণতাও বাড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশিরভাগই চার থেকে পাঁচ বছর বা তারও কম এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সি। এছাড়া শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তাতে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ। সর্দি, জ্বর-কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছে দূর-দূরান্তের মানুষ। হাসপাতালের বহির্বিভাগেও রোগীর দীর্ঘসারি দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এবং আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে দেখা যায়, চমেকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড রোগীর ভিড়ে ঠাসা। স্থান সংকুলান না হওয়ায় একেকটি শয্যায় দুই-তিনজন করে শিশুকে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আবার মেঝেতেও বিছানা পেতে রাখা হয়েছে আক্রান্ত শিশুদের। একদিকে অসুস্থতায় কাতরাচ্ছে এসব শিশু, তার ওপর ঘনঘন লোডশেডিং বাড়তি যন্ত্রণা হয়ে দেখা দিয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টায় চমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে অন্তত ছয়বার বিদ্যুৎ যেতে দেখা গেছে। এ সময় প্রচণ্ড গরমে শিশু ও তাদের অভিভাবকদের হাঁসফাস করতে দেখা গেছে।
সাতকানিয়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়ন থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত চার বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে গত ১৪ এপ্রিল চমেক হাসপাতালে এসেছিলেন জাহানারা বেগম। তিন দিন ধরে মেয়ে রোকসানাকে নিয়ে হাসপাতালে থাকলেও এখনো কোনো উন্নতি হয়নি। ডাক্তার আরও সাত দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
জাহানারা বেগম বলেন, দুই মেয়ের মধ্যে রোকসানা ছোট। বড় মেয়ের বয়স ১২ বছর। তিন দিন ধরে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। আমার শাশুড়িও আমার সঙ্গে আছেন। স্বামী চাকরি করায় আসতে পারেন না। মেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। কথা বলতে পারছে না। ডাক্তার আরও সাত দিন থাকতে বলেছে। এরপরও উন্নতি না হলে মেয়েকে ঢাকায় বা চট্টগ্রামের ভালো কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করাব। একই শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছিল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সাত বছর বয়সী শিশু আবদুল ওয়াহাব। দুই দিন আগে ভর্তি হলেও সিট না পাওয়ায় মেঝেতে জায়গা হয়েছিল ওয়াহাবের।
ওয়াহাবের বাবা আবদুল মালেক বলেন, সকাল থেকে ছেলের পাতলা পায়খানা শুরু হয়। স্যালাইন খাওয়ানোর পরেও থামছিল না। ২৪ ঘণ্টাতেও অবস্থার উন্নতি না হলে মেডিকেলে চলে আসি। এখানে পর্যাপ্ত সিট না থাকায় প্রথমে মেঝেতে দুই দিন কাটাতে হয়েছে। আজ (বুধবার) সকালে একটি বেডে জায়গা হয়েছে। তাও আরেকজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হচ্ছে।
চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. এ কে এম রেজাউল করিম জানান, শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৭০টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিলেন ১৬৪ জন। এদের বেশির ভাগই ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও খিঁচুনি রোগী। এ ছাড়া একই বিভাগের অধীনে আট নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে রোগী ছিলেন ৪০ জন। আর আইসিইউতে ভর্তি আছেন ১০ জন।
ডা. রেজাউল বলেন, গরমের সময় শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কারণ তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। আমাদের ওয়ার্ডে বেশ কয়দিন ধরেই রোগীর চাপ বেড়েছে। আমরাও সর্ব্বোচ্চটা দিয়ে সবাইকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা ডা. ফারহানা জেরিন জানান, হাসপাতালের সব শয্যাতেই রোগী রয়েছে। নতুন কোনো রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। অধিকাংশ রোগীই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০টি নতুন শিশু ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৪ জন, থ্যালেসামিয়া ৯ জন, নিউমোনিয়া ছয়জন ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছে একজন।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম আহসান বলেন, এক সপ্তাহ ধরে অনেক গরম পড়ছে। শিশু ও বৃদ্ধদের অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার বেশি। হাসপাতালে চাপও বেড়েছে। শিশু ওয়ার্ডে স্বাভাবিক সময়েও চাপ থাকে। সবসময় সবাইকে সিট দেওয়া যায় না। এখন চাপ একটু বেশি। সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার রোগী।
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডেও গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ৪০ রোগীর মধ্যেই ২৮ জনই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। ওয়ার্ডের বাইরেও রোগীদের সেবা নিতে দেখা গেছে।
স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে বেশি শিশু রোগী ভর্তি আছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালেও। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ২৬২টি শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছে।
আর চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে ১৬২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মীরসরাইয়ে ১৯ জন, সীতাকুন্ডে ১৬ জন, সন্দ্বীপে আটজন, ফটিকছড়িতে ১৪ জন, হাটহাজারীতে সাতজন, রাঙ্গুনিয়ায় ১২ জন, বোয়ালখালীতে ১৫ জন, আনোয়ারায় ১৩ জন, পটিয়ায় ১৬ জন, বাঁশখালীতে ১৯ জন, কর্ণফুলীতে দুজন, চন্দনাইশে ১১ জন, সাতকানিয়ায় ছয় ও লোহাগাড়ায় চারজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন, যার মধ্যে ১২৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, অতিরিক্ত গরম পড়ায় অনেকেই ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে খেয়ে নেন। আবার রাস্তার খোলা খাবার, পানি, শরবত ও কেটে রাখা ফলও খান। এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ দূষিত খাবার ও পানি থেকেই জন্ডিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়া আর হেপাটাইটিসের মতো রোগ ছড়ায়। গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। খাবার আগে, টয়লেটে যাওয়ার পরে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রামের রেডিসনে চলছে জমজমাট ঈদুল আজহা ফেস্ট।

চট্টগ্রামের রেডিসন ব্ল এর মেজবান হলে তিনদিনব্যাপী ঈদ-উল-আজহা ফেস্ট-২০২৫ শুরু হয়েছে। মেকাপ শেকাপ বাই জুহি চৌধুরীর আয়োজনে চট্টগ্রামের অন্যতম এই মেগা ইভেন্টের টাইটেল রূপা ফ্যাশনস। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ, বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়েট এর উপপরিচালক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান।

মেলা উপলক্ষে আয়োজক জুহি চৌধুরী বলেন, মেয়েদের সাথে ছেলেদের জন্যও দেশী ও বিদেশি সব কালেকশন নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের উদ্যোক্তাদের নিয়ে ৬০টির বেশি স্টল রয়েছে। এই মেগা ইভেন্টটি প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, প্রবেশে কোন এন্ট্রি ফি লাগবে না।

এই প্রদর্শনীতে সেলুন পার্টনার বিউটি বাফেট বিউটি সেলুন, স্কিনকেয়ার পার্টনার হামানদিস্তা, বিউটি পার্টনার স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস মিতা রহমান, মেকাপ পার্ট ফ্রেন্টিকা, ইভেন্ট পার্টনার – এক্টিভ ইভেন্ট ওয়েডিং প্ল্যানিং ফটোগ্রাফি পার্টনার তাসবির, ডেলিভারি পার্টনার আবদার। এছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিং পার্টনার হিসেবে থাকছে টপ-নচ ডিজিটাল, বেভারেজ পার্টনার সান-কুইক, সিনেমাটোগ্রাফি পার্টনার মাস্টার অব চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রাম কারাগারে কেএনএফ সদস্যের মৃত্যু।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক কেএনএফ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম লাল পেলেং কিং বম। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, কারাগারের কর্ণফুলী ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বন্দী ছিলেন লাল প্লে বম। আজ সকাল ৮টার দিকে ঘুম থেকে ওঠে চিৎকার শুরু করেন তিনি। তার হাত-পায়ে খিঁচুনি এসে যায়। এ সময় দ্রুত কারা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল লাল প্লে বম গ্রেপ্তার হন। একই বছরের ২৬ জুন বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয় তাকে। তার বিরুদ্ধে ব্যাংক ডাকাতি অপহরণসহ চারটি মামলা রয়েছে।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ