আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের উচ্ছেদে বড় অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ রোববার থেকে পাহাড়ের পাদদেশে উচ্ছেদ অভিযান শুরু

চট্টগ্রামের রেলওয়ের মালিকানাধীন নগরীর পাহাড়গুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধভাবে বসবাসরত লোকজনকে সরানো হচ্ছে। চলমান বর্ষায় ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে এ অভিযানে নামছে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। সপ্তাহব্যাপী এই উচ্ছেদ অভিযানে পাহাড়গুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধভাবে বসবাসরত লোকজনকে সরানোর পাশাপাশি রেলওয়ের ভূমিতে অবৈধভাবে তৈরি করা স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করা ব্যক্তি কিংবা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীর কোন তালিকা রেলওয়ের কাছে নেই। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমেই এই তালিকা হওয়া উচিত বলে মনে করেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, এই কাজে আমাদের কোন বাজেট নেই। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির আছে। তারা চাইলে এই তালিকা করতে পারে। এতে কাজ করা সহজ হবে।
সূত্র জানায়, গত ২৪ জুন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড় বা ভূমিতে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধভাবে বসবাসরত লোকজনকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সম্মিলিতভাবে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয় ওই সভায়।এরই ধারাবাহিকতায় নিজেদের মালিকানাধীন পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণদের সরাতে বড় অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। আজ রোববার সকাল ১০টায় নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন কলোনি সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। এ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চলবে ওইদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত। পরদিন সোমবার সকাল ১০টা থেকে নগরীর চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকার পাহাড় ও পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। এসব এলাকায় উচ্ছেদ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এরপর মঙ্গলবার সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে টাইগারপাস এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে। চলবে ওইদিন বিকেল পর্যন্ত।
এদিকে পবিত্র আশুরার বন্ধের কারণে বুধবার অভিযানে বিরতি দিয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। ওইদিন সকাল ১০টায় উচ্ছেদ অভিযান চলবে নগরীর মতিঝর্ণা বাটালি পাহাড়ের পাদদেশে। সবমিলিয়ে সপ্তাহব্যাপী এই উচ্ছেদ অভিযানে নগরীর ৬টি পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরিয়ে দেয়া হবে।
তবে শুধু উচ্ছেদ করেই পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সরানো কঠিন বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, উচ্ছেদের সঙ্গে যারা এসব স্থাপনা তৈরি করছে, ভাড়া দিচ্ছে, সেখানে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ দিচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। নাহয় বছর বছর এই ‘উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা’ চলতে থাকবে। স্থায়ী কোন সুফল আসবে না।
অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশে একজন মানুষও যেন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করতে না পারে- অভিযানে সেটি নিশ্চিত করা হবে। রেলওয়ের পাহাড়ে প্রাণহানি শূন্যে নামিয়ে আনতে চাই আমরা।
অবৈধ স্থাপনা তৈরিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া কেবল উচ্ছেদ অভিযানের সমালোচনা করেছেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও টিআইবি চট্টগ্রামের সভাপতি এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, রেলওয়ের পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরিতে সংস্থাটির কিছু কর্মীই জড়িত। উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।তিনি বলেন, বর্ষা এলেই প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এরপর সারাবছর ঘুমিয়ে থাকে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি থামাতে না পারলে উচ্ছেদ করে লাভ হবে না। কেবল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কষ্টই বাড়বে। তাই পাহাড়ে প্রাণহানি শূন্যে নামিয়ে আনতে যারা সেখানে অবৈধভাবে স্থাপনা করছে, তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তালিকা ধরে ব্যবস্থা নিলে সুফল আসবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ভোলায় জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত ।

দ্বীপজেলা ভোলার আধুনিক সাহিত্য সংগঠন জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে ।গতকাল ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে অনুষ্ঠিত জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম এর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান, জাতীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট ভোলা জেলা শাখার সদস্য সচিব প্রভাষক কবি মিলি বসাক, জলসিঁড়ির সদস্য সচিব কবি মহিউদ্দিন মহিন, জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জলসিঁড়ির সংগঠক কবি নীহার মোশারফ, আবৃত্তিশিল্পী সমাজসেবক মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ ।

সভায় উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম কে সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সাংবাদিক কবি রিপন শানকে নির্বাহী সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সংগঠক মহিউদ্দিন মহিনকে সাধারণ সম্পাদক, কবি গবেষক কবি নীহার মোশারফ কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫- ২০২৭ গঠন করা হয়েছে ।

কমিটির সহ-সভাপতিগণ হচ্ছেন- সিনিয়র প্রভাষক কবি মিলি বসাক, কবি মোঃ জুলফিকার আলী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণ হচ্ছেন- কবি আল মনির, আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি । অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাংবাদিক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ । নির্বাহী সদস্যগণ হচ্ছেন- অধ্যক্ষ কবি এম এস জালাল বিল্লাহ, কবি দিলরুবা জ্যাসমিন, কবি চৌধুরী সাব্বির আলম এবং কবি এরশাদ সোহেল ।

আসছে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার বিকেল ৪ টায় ভোলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য জলসিঁড়ির মাসিক সাহিত্য সভায় নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ