আজঃ শুক্রবার ১৪ মার্চ, ২০২৫

হালদার চরে শত শত একর জমিতে মরিচ চাষ, বাম্পার ফলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর তীরে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মনে খুশির জোয়ার বইছে। শুধু নদীর তীর নয়, নদীর জেগে উঠা চরেও মরিচের চাষাবাদ করেন কৃষকরা। এখানকার উৎপাদিত মরিচ অন্য এলাকার জমি থেকে উৎপাদিত মরিচের চেয়ে কদর বেশি। সুস্বাদু রান্নার প্রধান উপাদান মসল্লা। মসল্লার প্রধান উপকরণ শুকনো মরিচ।হালদার পাড়ের লাল মরিচ এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। ভারত, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব ও দুবাইয়ে হালদা নদীর তীরের উৎপাদিত মরিচের সুনাম রয়েছে। প্রবাসীরা দেশে ছুটি শেষ করে প্রবাসে যাওয়ার সময় তারা ব্যাপক পরিমাণ এখানকার উৎপাদিত লাল মরিচ ক্রয় করে মিলে গুঁড়ো করে নিয়ে যান।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেহ নগর, নদীম পুর, ইন্দিরা ঘাট, গহিরা ইউনিয়নের কাজী পাড়া, কোতোয়ালী ঘোনা, রাউজান পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বদুর ঘোনা, মঘাশাস্ত্রি বড়ুয়া পাড়া, অংকুরী ঘোনা, পশ্চিম গহিরা বড়ুয়া পাড়া, দক্ষিন গহিরা, মোবারক খীল জামতল, পশ্চিম বিনাজুরী, কাগতিয়া,কাসেম নগর, গোলজার পাড়া, আজিমের ঘাট, ডোমখালী, মগদাই, পশ্চিম আবুর খীল, খলিফার ঘোনা, উরকিরচর, মইশকরম, হারপাড়া, সার্কদা, মোকামী পাড়া, কচুখাইন, হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ, ধলই, লাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী, মেখল, মির্জাপুর, গুমানমর্দন, গড়দুয়ারা, মাদ্রাসা, দক্ষিন মার্দ্রাসা এলকায় হালদা নদীর তীরে ফসলি জমিতে শুস্ক মৌসুমে মরিচ চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। কৃষকরা হালদা নদী থেকে সেচের মাধ্যমে পানি ব্যবহার করেন মরিচ ক্ষেতে।
রাউজান উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুম কবির বলেন, রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় দুইশত ত্রিশ হেক্টর জমিতে মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। তার মধ্যে হালদা নদীর তীরের ১ শত হেক্টর ফস্ল জমিতে মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। প্রতি হেক্টর মরিচ চাষাবাদ করতে খরচ হয় আটার হাজার পাঁচশত টাকা। প্রতি হেক্টর মরিচ ক্ষেতের ফলন থেকে কাচাঁ মরিচ উৎপাদিত হয় পাচঁ মেট্রিক টন। উৎপাদিত কাচাঁ মরিচের বর্তমান বাজার মুল্য অনুসারে বিক্রি করে দুই লক্ষ নব্বই হাজার টাকা আয় করেন তারা। প্রতি হেক্টর মরিচ ক্ষেতের জমি থেকে শুকনা মরিচ উৎপাদিত হয় এক মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরের উৎপাদিত এক মেট্রিক টন শুকনা মরিচ বর্তমান বাজার মুল্য অনুসারে বিক্রি করে কৃষকেরা তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা আয় করেন বলে উপজেলা কৃষি অফিস জানায়।
হালদা পাড়ের মরিচ চাষি নুরুল আলমের সাথে কথা বলে জানা যায় আমাদের হালদা পাড়ের লাল মরিচ খুব সুস্বাদু ও ঝাল-মিষ্টি। তাই দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। তিনি বলেন, আমি গত বছর ৬০ শতক জমিতে চাষ করেছি। ফলনও খুবই ভালো হয়েছে। এবছরও ৮০ শতক জমিতে মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করেছি ।
হাটহাজারী পুর্ব জেবরা মিঠাছড়ার কুল এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম সওদাগর বলেন, মিঠছড়া খালের পাড়ে ৮ শতক জমিতে উন্নত জাতের মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করেছি। ৮ শতক জমিতে মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করতে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গাছে মরিচ ধরেছে। হাটহাজারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে হাটহাজারী উপজেলার হালদা নদীর তীরের ফসলি জমিতে প্রতিবছর ২২০ হেক্টর জমিতে হালদা মরিচ চাষ হয়। আবার হালদা নদীর বাইরেও ভালো মরিচ চাষ হয়ে থাকে। সেগুলোও মিষ্টি ও সুস্বাদু। হাটহাজারী বাজারে প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার বাজার বসে। এই দুইদিন দেশের বিভিন্ন জেলা হতে আগেভাগে মরিচ ক্রেতারা চলে আসে মরিচ কিনতে।
জানা গেছে, পাইকারি বিক্রেতারা হাটহাজারী বাজার থেকে ক্রয় করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা মেশিনে সেগুলো প্যাকেটজাত করে। বিশেষ করে হাটহাজারির বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকেরা হালদা নদীর চরে শত শত একর জমিতে মরিচ চাষ করে থাকেন।
মৌসুমী প্রাকৃতিক অবস্থা ভালো থাকলে মরিচ চাষিরা প্রতি মৌসুমে ৭০ হাজার থেকে প্রায় এক লক্ষ টাকার উপর পর্যন্ত মরিচ বিক্রি করে থাকে। এই লাল মরিচ চাষের শুরুতে প্রায় বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকার মতো ব্যয় হলেও লাভ হয় তার দ্বিগুণ। সপ্তাহে দুইদিন হাটহাজারী নাজিরহাট কাটিরহাট বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বাজার বসে ব্যবসায়ীরা হাটহাজারীতে এসে পাইকারি মূল্য মরিচ কিনে নিয়ে যান। রাউজানের হাট বাজারেও হালদা এ মরিচ বিক্রয় করেন কৃষকরা।
হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার অন্যান্য বাজারগুলোর চেয়ে হাটহাজারী বাজারে অতি শুলভ মূল্যে এখানকার মরিচ পাওয়া যায়। হাটহাজারীর হালদা পাড়ের লাল মরিচ প্রায় প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বেশি চাহিদার কারণে এই মরিচের মূল্য বেশি বলে জানান ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

রাজশাহী নিউ মার্কেটে পণ্য কিনে পুরষ্কার জিতে নিন

রাজশাহী নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে পবিত্র ঈদুল ফিতুর ও নববর্ষ উপলক্ষে এই আয়োজন করা হয়েছে। মাত্র ৫০০ টাকার পন্য ক্রয় নিয়ে জিতে নিতে পারেন প্রথম পুরস্কার সুজুকি জিকসার মোটরসাইকেল। দ্বিতীয় পুরস্কার দুই পাল্লার ফ্রিজ। তৃতীয় পুরস্কার সোনার চেন। এছাড়াও রয়েছে মোট ১০১ টি পুরস্কার আগামী ১৮ই এপ্রিল রাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে। ঐ দিনই বিজয়ী কুপন নাম্বারের পুরস্কার দেওয়া হবে। অনেক পরে এরকম একটি আয়োজন করতে পেরে রাজশাহী নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি অত্যন্ত আনন্দিত।

সকল ক্রেতা সাধারনকে রাজশাহী নিউমার্কেটে ঈদুল ফিতর এবং নববর্ষের আনন্দ কে ভাগাভাগি করে নিতে উনাদের এই আয়োজন করেছেন। আগামীতে ক্রেতা সাধারণের জন্য আরও বড় আকারে এই ধরনের ব্যতিক্রম ধরণের উপহারের ব্যবস্থা করা হবে। এই ক্যম্পেইন চলাকালীন সময়ে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন

এনআইডি পরিষেবা নতুন কমিশনে স্থানান্তরের পরিকল্পনায় চট্টগ্রামে মানববন্ধন।

জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) পরিষেবা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন হতে সংবিধিবদ্ধ নতুন কমিশনে স্থানান্তরের কূট পরিকল্পনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম অঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত লাভ লেইন মোড়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচীতে

আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন। মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচী পালনকালে নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেন, জাতীয় পরিচয় পত্রকে (এনআইডি) বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে নতুন একটি কমিশনে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা রাতের ভোটের আয়োজক ও কুশীলবদেও সাজানো একটি ষড়যন্ত্র ছিল। একই অবস্থা সামনের দিনগুলোকে আরও বেশি অস্থির করে তুলবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। নির্বাচন কমিশনে ৩৫টি বা তার বেশি তথ্য উপাত্ত বোনাস হিসেবে আসেনি। এটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেও দিনরাত

পরিশ্রমের ফল। ভোটার তালিকা প্রণয়ন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। যদি সকল তথ্য ভান্ডারকে একসাথে করতে হয় এবং স্বাধীন কর্তৃপক্ষের অধীনে নিতে হয় তাহলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি সর্বোত্তম সাংবিধানিক ও শক্তিশালী জাতীয় প্লাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হওয়া অতি স্বাভাবিক।

কর্মসূচীতে বক্তারা আরও বলেন, এক বা একাধিক
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান করে এনআইডিসহ অন্যান্য তথ্য ভান্ডারকে আরও সুসংগত করা যায়। নির্বাচন
কমিশনকে একই সময়ে বিদায় না দিয়ে প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর নিয়মতান্ত্রিকভাবে দুই জন করে নিয়োগ ও বিদায় নিলে তথ্য ভান্ডারসহ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও
সুশৃঙ্খলতায় আনা যায় এবং মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে সিনেটের মত জাতীয় অভিজ্ঞতা ও ধারাবাহিকতাও রক্ষা করা সম্ভব। এতে করে আমাদের ঘুণেধরা ও ক্ষয়িষ্ণু সহমর্মিতা রক্ষা করাসহ জাতীয় স্বার্থ ও সংহতি আরো উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক অতি মর্যাদা বিবেচনা করে তাকে কর্মহীন করা ও তার অর্জিত কর্মক্ষমতাকে কেড়ে নেয়ার অর্থ হলো ধর্মীয় গ্রন্থকে না পড়ে গিলাব বেঁধে উপরের থাকে তুলে রাখা একই অন্ধত্ব ও জাতীয় বিভ্রান্তি। অন্যথায় ডাল হৌসির নীতির মত এক ডিপার্টমেন্টের অর্জনকে অন্য ডিপার্টমেন্টে/কমিশনে নিয়ে গেলে বিভিন্ন বিভাগের

ইনোভেশনসহ জাতীয় উন্নয়নের মনোবল ধ্বংস হতে পারে। তাই জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) পরিষেবা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার জোর দাবী জানান নির্বাচন কর্মকর্তারা।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ