আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

যেখানে উম্মাহর দেহে যন্ত্রণা, সেখানে ফিলিস্তিন এক রক্তাক্ত হৃৎপিণ্ড।

লেখক, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর

“মুমিনগণ এক দেহের মতো—যদি দেহের এক অঙ্গ ব্যথিত হয়, গোটা শরীর তার ব্যথায় কাঁপে।” — (হাদীস, সহীহ মুসলিম।ফিলিস্তিন—পৃথিবীর মানচিত্রে ক্ষুদ্র এক ভূখণ্ড। অথচ ইতিহাসের সবচেয়ে ভারী অশ্রুগুচ্ছে নাম লিখিয়ে রেখেছে বহু শতাব্দী ধরে। গাজার ধূলোমলিন বাতাসে আজ আর বালুকণার ঘ্রাণ নেই, সেখানে শুধু বারুদের গন্ধ। আকাশে প্রজাপতির বদলে ড্রোন, শিশুর খেলনার স্থানে রকেটের ধ্বংসাবশেষ। ফিলিস্তিন আজ একটি জাতির নয়, বরং গোটা উম্মাহর হৃদয়ে গেঁথে থাকা এক দীর্ঘতর আর্তনাদ।

প্রতিদিন সূর্য ওঠে, কিন্তু গাজার মানুষ দেখে না আলো—দেখে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া স্বজনের হাত। প্রতিটি ভোর যেন এক নতুন শোকাবহ অধ্যায়। ঘুম ভাঙে বোমার শব্দে, আবার ঘুম পাড়ায় কান্নার চাপে। মৃত শিশুদের জন্য কাঁদে পৃথিবীর বিবেক, আর মুসলিম উম্মাহর মাঝে জন্ম নেয় এক প্রশ্ন—আমরা কী এখনো এক দেহ, নাকি শুধুই নামের উম্মাহ?

রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা যদি এক দেহের মতো না হও, তবে তোমাদের ঈমান অপূর্ণ।” কিন্তু আজ ফিলিস্তিন যখন পুড়ে যায়, আমরা দাঁড়িয়ে থাকি কেবল নীরব প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে। বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো তাদের নিজস্ব স্বার্থের পাল্লায় ফিলিস্তিনকে মাপে। আর মুসলিম রাষ্ট্রগুলো—তারা হয়তো সম্মেলন ডাকে, বিবৃতি দেয়, দোয়া করে। কিন্তু ফিলিস্তিনের শিশুরা কি তাতে বাঁচে?

আমরা কি ফিলিস্তিনিদের জন্য শুধু আহারে ব্যস্ত, নাকি অন্তরে তাদের বেদনা বয়ে চলেছি? যদি তারা আমাদের ভাই হয়, তবে কেন আমাদের প্রতিবাদ এত মৃদু? কেন আমাদের জবান এত জড়তা পূর্ণ, কেন আমাদের হৃদয় এত নির্লিপ্ত?

এই কলাম কোনো সাময়িক রাজনীতি বা সংবাদ বিশ্লেষণ নয়—এ এক অভ্যন্তরীণ আত্মপ্রকাশ। এক লেখকের নয়, এক মুসলিমের হাহাকার। ফিলিস্তিনকে আজ দয়ায় নয়, দায়িত্বে দেখতে হবে। এই ভূমি আমাদের কেবল দুঃখ দেয় না—এ আমাদের ঈমানের আয়না। সেখানে দেখা যায়, আমরা কতটা মুসলিম, কতটা মানুষ।

গাজা যখন পোড়ে, তখন মক্কার বাতাসও কাঁদে।
জেরুজালেম যখন কাঁদে, তখন মদিনার মসজিদও শিউরে ওঠে।
কিন্তু আমরা কি কান পেতে শুনি সেই কান্না?

‘এক উম্মাহ, এক দেহ’—এই পবিত্র বাণী যেন আর কেবল হাদীসের পাতায় না থাকে।
এই বাণী হোক হৃদয়ের স্পন্দন। যেন ফিলিস্তিনের কান্না আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়,
জেগে তোলে আমাদের বিশ্বাস, উদ্দীপনা, প্রতিবাদ—আর সর্বোপরি, ভালোবাসা।

কারণ ফিলিস্তিন এখন শুধু নির্যাতনের নাম নয়, এ এক রক্তাক্ত হৃৎপিণ্ড, যা উম্মাহর বুকে প্রতিনিয়ত ধুকপুক করে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

আমিরাতে ৬শ গাড়ি দিয়ে ‘ঈদ আল ইতিহাদ ইউএই ৫৪’ বানিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে আজমান।

যানবাহন ব্যবহার করে বিশ্বের বৃহত্তম উদযাপন বাক্যাংশ তৈরি করে আজমান গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করেছে। ৬০৩টি যানবাহনকে “ঈদ আল ইতিহাদ ইউএই ৫৪” বার্তাটি স্পষ্টভাবে লেখার জন্য সাজানো হয়েছিল।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫৪তম ঈদ আল ইতিহাদ উদযাপনের সাথে মিলে যাওয়া এই কৃতিত্ব গিনেস বিচারক প্যানেল কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে এবং পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে প্রদর্শিত অসাধারণ নির্ভুলতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য উচ্চ প্রশংসা করেছে।

এই স্কেলের একটি সুস্পষ্ট বাক্যাংশ তৈরির জন্য ৬০৩টি যানবাহনের সমন্বিত চলাচলকে সমন্বয় করা একটি অভূতপূর্ব কৃতিত্ব হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে, যা অসাধারণ দৃশ্যমান প্রভাব সহ বিশ্বমানের অনুষ্ঠান সম্পাদনের জন্য আজমানের ক্ষমতাকে তুলে ধরে।

আজমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ, আজমান হোল্ডিং এবং রায়াত কোম্পানি যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল। অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়, যা নতুন রেকর্ডকে স্বীকৃতি দেয়, যা এই জাতীয় উপলক্ষকে একটি বিশিষ্ট উপায়ে উপস্থাপনের প্রচেষ্টাকে উদযাপন করে যা সংযুক্ত আরব আমিরাত ইউনিয়নের অর্জনের আনন্দ এবং গর্বকে গভীরভাবে প্রতিফলিত করে।

আজমান ৬০৩টি যানবাহন নিয়ে ‘ঈদ আল ইতিহাদ ইউএই ৫৪’ গঠনের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করেছে পর্যটন, সংস্কৃতি এবং তথ্য বিভাগের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আজিজ বিন হুমাইদ আল নুয়াইমির পৃষ্ঠপোষকতায় চিত্তাকর্ষক এবং অত্যন্ত সমন্বিত অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের দোয়া মাহফিল খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায়

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রেস ক্লাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেন, দেশের গণমাধ্যমের উন্নয়ন, সাংবাদিক সমাজের কল্যাণ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়া ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ চিরদিন স্মরণ করবে। বক্তারা ঐতিহাসিক অবদান স্মরণ করতে গিয়ে উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের উন্নয়নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন।

১৯৮০ সালে বায়েজিদের শেরশাহ এলাকায় সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য সাংবাদিক হাউজিং সোসাইটি-তে ১৬ একর জমি বরাদ্দ দেন, যা ১৯৮১ সালে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সরকারের আমলে তা রেজিস্ট্রি করা হয়। ১৯৯৪ সালে প্রেস ক্লাবের আর্থিক সংকট মোকাবিলায় তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৫ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছিলেন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রেস ক্লাবের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন। আমি অতীতে তাকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আবারও অনুরোধ জানাই—বেগম খালেদা জিয়াকে প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হোক।

দোয়া মাহফিলে দেশ ও জাতির শান্তি, কল্যাণ ও স্থিতিশীলতার পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন শাহ আনিস জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের অন্তবর্তী কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, প্রেস ক্লাবের সাবেক লাইব্রেরি সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা।মাহফিল শেষে বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ