
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী বীচে বিষধর ‘ইয়েলো-বেলিড’ সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি এই প্রজাতির সাপ দেখা গেছে, যার মধ্যে একটি পর্যটকরা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। বাকি দুটিকে উদ্ধার করে সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ বুধবার (৫ জুন) বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে একটি ইয়েলো-বেলিড সাপ দেখা যায়। এর আগে, ২৯ মে লাবণী পয়েন্টে ভেসে আসা একটি সাপকে উদ্ধার করে সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর সোমবার, এই ধরনের আরেকটি সাপ সৈকতে এলে পর্যটকরা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাপের মাথা লম্বা ও আকৃতিতে শরীর থেকে আলাদা। শরীরের উপরের অর্ধেক কালো, গাঢ় নীলাভ ও বাদামি রঙের। নিম্নাংশ হলুদাভ এবং তীব্রভাবে চিত্রিত। এছাড়াও, এর দৈহিক আঁশ ছোট, মসৃণ এবং ষড়ভুজ আকারের; মাথার আঁশ বড় এবং নিয়মিত। চোখে নীলচে-কালো আইরিস আছে।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, “হলুদ-পেটযুক্ত বা ইয়েলো বেলিড সাপ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং ভারত মহাসাগরের গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে ১৮-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বসবাস করে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত সাপ। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সাগরেও এটির বিস্তৃতি রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই সাপ সাধারণত সৈকত থেকে দূরে সাগরের মুক্ত জলে সাঁতার কাটে। এরা সাগরের ওপরের স্তর অর্থাৎ পেলাজিক স্তরে বসবাস করে এবং সাগর তলে এদের দেখা পাওয়া যায় না। অসুস্থ বা আহত হয়ে উপকূলে ভেসে এলে এই সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন সতর্কতার সঙ্গে নাড়াচাড়া না করলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি এবং ছোবলের শঙ্কা থাকে।”
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাইফগার্ড জয়নাল আবেদীন জানান, “গত এক সপ্তাহে সৈকতে ভেসে আসে তিনটি অসুস্থ সামুদ্রিক সাপ। প্রত্যেকটা ইয়েলো বেলিড। বুধবার লাবনী পয়েন্টে ভেসে আসা সাপটি সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। এর আগে সোমবার একটি সাপ পর্যটকরা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, “পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিচ কর্মীরা মাইকিং করে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিচ্ছে। হোটেল ও সৈকতের প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লেতেও সাবধান বাণী লেখা আছে। সাম্প্রতিক ঘটনার পর এ বিষয়ে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করা বাড়ানো হবে এবং পর্যটকদের আরও সতর্ক করা হবে।”
উল্লেখ্য যে, , ইয়েলো-বেলিড সাপ সাধারণত আক্রমণাত্মক হয় না। তবে, বিরক্ত বা হুমকির মুখে পড়লে তারা আত্মরক্ষার্থে ছোবল মারতে পারে। পর্যটকদের সতর্কতা অবলম্বন করে নিরাপদে সৈকতে নামা উচিত বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।