আজঃ সোমবার ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে স্কুলে ছাত্রী নিপীড়ন ঃ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামের সেন্ট স্কলাস্টিকাস্ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায়। ইতোমধ্যে নিপীড়নে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের মধ্যে একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।তাদের স্থায়ী চাকরিচ্যুতি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে নগরীর পাথরঘাটায় বিদ্যালয়টিতে গতকাল বুধবার (১২ জুন) সকাল থেকে বিক্ষোভ হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সম্মিলিত সইসহ এসব দাবি প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, অভিযুক্ত শিক্ষকদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা জেনেও ব্যবস্থা না নিয়ে প্রধান শিক্ষিকা উল্টো তাদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন।অভিযুক্ত অন্যজন সুরজিৎ পাল (৩৩)। এছাড়া অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে সহযোগিতা করায় ওমর ফারুক নামে আরেক শিক্ষকেরও শাস্তি দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সেন্ট স্কলাস্টিকাস্ গার্লস স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুষ্মিতা দে বলেন, আমাদের স্কুলে ২০১৭ সাল থেকে এ ঘটনা ঘটে আসছে। আমরা বারবার স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উলটো তারা অভিযুক্ত শিক্ষকদের রক্ষা করেছে, যেখানে আমাদের রক্ষা করার কথা তাদের। স্কুলের মেয়েদের নানা হুমকি দিয়ে বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এক শিক্ষককে এ বিষয়ে যখন তিনবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয় সে শিক্ষক এ কাজ আবার করে। প্রধান শিক্ষিকাও আমাদের এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করেনি। আমাদের দাবি, যে তিন জন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে তাদের যাতে স্কুল থেকে একেবারে বহিষ্কার করা হয়।
দীপেন্দ্রী শর্মা নামে আরেক ছাত্রী বলেন, আমি নবম শ্রেণি থেকে এ স্কুলে। এখন কলেজে উঠেছি। উনাদের চোখের দৃষ্টি অনেক খারাপ। মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক যদি এরকম হয় আমরা কোথায় যাব। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রথম থেকেই তাদের রক্ষা করছে। উনারই দোষ।স্কুল কর্তৃপক্ষই যদি ভালো না থাকে মেয়েরা সেইভ ফিল কীভাবে করবে। আমরা এখানে নিরাপদ না। আমরা এটার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। ওই স্যাররা আমাদের সঙ্গে এ কাজ আগেও করেছে। আমরা এর ভুক্তভোগী। দুই জন শিক্ষকের জন্য পুরো স্কলাসটিকাস’র নাম খারাপ করা যাবে না।
জেসমিন পিয়া নামে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের নিরাপত্তাই আমাদের মূল দাবি। স্কুলের শিক্ষকরাই যদি আমাদের কোমলমতি বাচ্চাদের সঙ্গে এরকম আচরণ করে তাহলে বাচ্চারা কী শিখবে। এটা আমরা কীভাবে সহ্য করব। আর অধ্যক্ষ সব জানার পরও চুপ ছিলেন। উনি কীভাবে বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে গেল। ওই তিন শিক্ষককে তিনি কীভাবে রক্ষা করে গেলেন। রকিব উদ্দিন, সুরজিৎ পাল ও তাদের সহায়তাকারী ওমর ফারুক নামে তিন শিক্ষককে আমরা চাই না। আমরা চাই তাদের তিন জনকে পুরো বাংলাদেশে শিক্ষকতা থেকে বহিষ্কার করা হোক। তারা যাতে আর শিক্ষকতা করতে না পারে।
এ বিষয়ে জানতে সেন্ট স্কলাসটিকাস্ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী সেলিন কস্তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
এর আগে, মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে কোতোয়ালি থানায় যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভিকটিম ছাত্রীর মা। পরে অভিযান চালিয়ে মামলায় অভিযুক্ত রকিব উদ্দিন (৩৫) নামে এক শিক্ষককে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর বাকলিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ভিড় করে আছেন। যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষকদের শাস্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন তারা। অভিভাবকরা স্কুলের ভেতরে ঢুকে প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী সেলিনা কস্তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি দেখা করেননি। পরে ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর ও এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক গিয়ে প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে দেখা করেন।
জানতে চাইলে পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর বলেন, আইনিভাবে যা যা করা দরকার আমরা সব করছি। ভিকটিমকে আমি নিজে নিয়ে গিয়ে মামলা করিয়েছি। ওই দুই শিক্ষককে স্কুল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। মামলা করার পর এক শিক্ষক গ্রেফতার হলেও অন্য একজন এখনও পলাতক। তাকে ধরতেও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। আজ (বুধবার) সকালে স্কুলের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষোভ করেছে। আমি গিয়ে তাদের বলেছি দুই নরপিশাচের জন্য এত বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুলের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে না। সবাই যেন স্কুলের আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করে সেজন্য আহ্বান জানিয়েছি। পুলিশকে বলেছি যাতে ভিকটিম জিজ্ঞাসাবাদে কোনো ভয় না পায়। এ স্কুল তো আমাদের। স্কুলের ছাত্রীই আমার মেয়ের মতো।
এদিকে, মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষক রাকিব চতুর্থ শ্রেণির বিজ্ঞান এবং সুরজিত পঞ্চম শ্রেণির একই বিষয়ের শিক্ষক। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে প্রায় দেড় বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে ক্রমাগত বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন করে আসছেন এ দুই শিক্ষক।
সর্বশেষ গত ৯ জুন সকাল ১০টার দিকে টিফিন বিরতির সময় অভিযুক্ত দুই শিক্ষক কৌশলে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীকে ছয় তলার বাথরুমের পাশে নিয়ে যান। সেখানেই অবাঞ্ছিতভাবে ওই ছাত্রীকে স্পর্শ করে শ্লীলতাহানি করেন। তাদের এমন আচরণে ভয় পেয়ে চিৎকার দিলে ওই ঘটনা কাউকে না জানানোর হুমকি দিয়ে কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান তারা। ভুক্তভোগী ছাত্রী ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানায়নি। স্কুল ছুটির পর বাসায় এসে কান্নাকাটি শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ছাত্রীর মা কান্নার কারণ জানতে চাইলে ঘটনার বিস্তারিত বলে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক বলেন, মঙ্গলবার সকালে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে আমরা এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছি। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য একজনকে ধরতেও আমাদের অভিযান চলছে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এর আগেও যৌন নিপীড়নের কোনো অভিযোগ এসেছে কি না? এমন প্রশ্নে ওসি ওবায়দুল হক বলেন, সব তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর সব বলা যাবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

অংশ নিয়েছে প্রায় ৬০০ প্রতিযোগী চট্টগ্রামে এনআইটি উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায়

বিজ্ঞানমনষ্ক শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের মুরাদপুরস্থ’ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি)’র উদ্যোগে ১১তম বারের মতো “এনআইটি উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা-২০২৫” এনআইটি’র অডিটোরিয়ামে শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ কারীগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্কভিউ হসপিটাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. এটি. এম. রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট অধ্যক্ষ মো কামাল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন এনআইটি’র চেয়ারম্যান আহসান হাবিব।

প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ২৬৪টি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্প প্রর্দশিত হয়। এতে প্রায় ৬০০ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন বলেন, আজকের এই প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র একটি বিজয়ীর খোঁজ নয়, বরং এটি আমাদের সবার জন্য একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সকলেই নতুন কিছু শিখেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় উদ্ভাবন নিয়ে আসার অনুপ্রাণিত হয়েছে। প্রতিযোগীতায় শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে, আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। প্রত্যেকটি প্রকল্পই আলাদা এবং একেকটি নতুন চিন্তার প্রতিফলন। উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা শুধু একটি ইভেন্ট নয়; এটি হলো কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির সবচাইতে কার্যকর মঞ্চ।

ড. এটি. এম. রেজাউল করিম বলেন,দক্ষতা একজন মানুষকে কর্মবাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং তাকে স্বনির্ভর করতে সাহায্য করবে। উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের সেই দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কার্যকরী সমস্যা সমাধানের রুপরেখা তৈরী করে। অধ্যক্ষ মো কামাল হোসেন বলেন, এই প্রতিযোগিতায় উত্থাপিত সাশ্রয়ী ও টেকসই সমাধানগুলো কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম। আমাদের তরুণরা প্রমাণ করেছেন যে তাদের মেধা ও সৃজনশীলতাই দেশকে ‘আধুনিক বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের মূল চালিকাশক্তি।


ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির চেয়ারম্যান আহসান হাবিব বলেন, উদ্ভাবন শুধু প্রযুক্তির খেলনা নয়, উদ্ভাবন হল মানুষের জীবনকে সহজ ও অর্থপূর্ণ করার হাতিয়ার। আজকের এই ছোট ছোট ধারণাগুলোই আগামী দিনের বড় বড় শিল্প ও সামাজিক পরিবর্তনের বীজ বপন করছে।প্রতিযোগীতায় মোট ২৬৪ টি প্রজেক্ট অংশ নেয়। প্রজেক্ট সমুহকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে বিভিন্ন মানদন্ডে বিচার বিশ্লেষণ করার জন্য মূল্যায়ন দলে ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. এ. কে. এম. মাঈনুল হক মিয়াজী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. এইচ.এম

. এ আর মারুফ,চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান মো. দিদারুল আলম মজুমদার। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর সিভিল ডিপার্টমেন্ট প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মো জাহাঙ্গীর আলম, কম্পিউটার বিভাগের চীফ ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী মেহেদী, ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ চীফ ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী সুজিত কুমার বিশ্বাস, মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এর চীফ ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী নুরুননবী।

বিচারক প্যানেল প্রজেক্ট সমুহ মূল্যায়ন সম্পন্ন করেন। মূল্যায়নে প্রাপ্ত নাম্বারের ভিত্তিতে টপ টেন নির্ধারণ করে পুরস্কার হিসেবে ১ম,২য় ও ৩য় স্থান অর্জন কারীর মধ্যে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার ও ২০ হাজার নগদ অর্থ ও ক্রেস্ট পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া ইমার্জিং প্রজেক্ট হিসেবে চতুর্থ থেকে ১০ম স্থান অর্জনকারীদেরও ৫ হাজার নগদ অর্থ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সমাপনী পর্বে সকল অংশগ্রহণকারীকে সনদ বিতরণ করা হয়।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে লাগেজে মিলল ৯০ লাখ টাকার সিগারেট

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মালিকানাহীন ছয়টি লাগেজ থেকে ৮০০ কার্টন মন্ড ব্র্যান্ডের সিগারেট জব্দ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকাল ১১টার দিকে বিমানবন্দরের এরাইভাল হলের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড কর্নারের পাশ থেকে এসব লাগেজ উদ্ধার করা হয়। জব্দ হওয়া সিগারেট প্রতি কার্টন ১১ হাজার ২৫০ টাকা মূল্য ধরে মোট ৯০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, লাগেজগুলোর সঙ্গে কোনো যাত্রীর নাম, ট্যাগ বা মালিকানার কাগজপত্র ছিল না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও কেউ লাগেজের দাবি না করায় সেগুলোকে কাস্টমস আইন অনুযায়ী পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে লাগেজ খুলে ৮০০ কার্টন সিগারেট পাওয়া যায় এবং তা জব্দ করা হয়।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, লাগেজগুলো দীর্ঘ সময় ধরে মালিকবিহীন অবস্থায় ছিল। কেউ দায়িত্ব না নেওয়ায় সেগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে জব্দ করা হয়েছে। বিমানবন্দরে চোরাচালান ঠেকাতে নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে এবং অভিযান চলমান থাকবে বলে তিনি জানান।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ