আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে ‘প্রতিমা’ লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তদের ছুঁড়া গরম পানি ঃ সনাতনী সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ

জড়িতদের ছাড় দেয়া হবেনা - সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি

চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগি মোড় দিয়ে গণেশ পূজার প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময় ‘প্রতিমা’ লক্ষ্য করে উপর থেকে দুর্বৃত্তদের ছুঁড়া গরম পানি কাণ্ড নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল চেরাগী মোড়। মধ্যরাতে মুহুর্তেই নেমে এসে হাজার হাজার ভক্তের ঢল। চরম উত্তেজনাকর পরিবেশে স্লোগানে উত্তাল পুরো চেরাগী মোড়ের সড়ক। আশেপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একাধিক টিম। অন্যদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার নগরের চেরাগি পাহাড় মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিকেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। দাবি অনুযায়ী দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এ সময় দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব হামলার ঘটনার বিচার দাবি করেন তারা।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ‘আমরা কেন স্বাধীন নই’, ‘আমার মন্দিরে হামলা কেন?’, ‘দেশ ছাড়তে হুমকি কেন? রাষ্ট্র জবাব চাই’, ‘মানবসেবা যাদের ধর্ম তাদের ওপর হামলা কেন?’, ‘বাঁচতে হলে লড়তে হবে, আঘাত আসবে যেখানে প্রতিরোধ হবে সেখানে’-ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন অংশগ্রহণকারীরা।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে ভ্যানগাড়িকে লক্ষ্য করে পাশের ভবন থেকে গরম পানি এবং ইট ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠেছে। এ সময় দুই ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতেই তাৎক্ষণিক চেরাগি পাহাড় মোড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। এতে শত শত মানুষ যোগ দেন। তবে ভোর ৪টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ঘটনার পরপরই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সংক্রান্ত নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এসব গুজবে কান না দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে, চেরাগি মোড়ের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর একটি অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি।
জানতে চাইলে বিক্ষোভকারী ব্যাটারিগলি ধোপাপাড়া সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের একজন কর্মকর্তা বলেন, হাজারী লেন থেকে আমরা প্রতিমা নিয়ে ওই গাড়িতে করে ব্যাটারিগলি যাচ্ছিলাম। আমরা সুশৃঙ্খলভাবেই যাচ্ছিলাম। কদম মোবারক এলাকায় আমাদের ভ্যানগাড়ি দাঁড়ালে হঠাৎ পাশের বিল্ডিংয়ের উপর থেকে কিছু দুর্বৃত্ত গরম পানি নিক্ষেপ করে। এরপর কারণ জানতে বিল্ডিংয়ের উপরে উঠলে আমিসহ তিনজনকে আটকে রাখা হয়। আমি চলে আসতে সক্ষম হলেও অন্য দুজনকে বেধড়ক পিটুনি দেয়া হয়।
কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নওশের কোরেশী জানান, বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছুটে যান। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং উস্কানিদাতাদের পরিকল্পনা সফল হয়নি। ঘটনার সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। শীঘ্রই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হবে।
তিনি বলেন, ধর্ম আমাদের আবেগের জায়গা এবং এটাকেই ব্যবহার করে কুচক্রিমহল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে এবং করবেও। সেক্ষেত্রে ধর্মপ্রাণ সকলকেই সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে। যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করবে তাদেরকে আমরা সবাই মিলে প্রতিহত করবো।বিপ্লবকে ব্যাহত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে রাফি বলেন, ‘কারো পাতা ফাঁদে পা দিলে আমাদের শহীদ ভাইদের রক্ত বৃথা যাবে।

**

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ