আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে জরাজীর্ণ জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরে কমেছে দর্শনার্থী, সংস্কার জরুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিগত ৬০ বছরেও এই জাদুঘরে ছোঁয়া লাগেনি উন্নয়নের।এশিয়া মহাদেশে দুটি জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের মধ্যে এই একটি জাদুঘরে একের পর এক দর্শনাথী কমে গেছে। খসে পড়ছে জাদুঘর ভবনটির দেয়ালের পলেস্তারা। জাদুঘরে একটি গ্রন্থাগার থাকলেও তার অবস্থা আরও নাজুক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জাদুঘর ভবনটির অবস্থাও অত্যন্ত জরাজীর্ণ। বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে, দেয়াল বেয়ে গ্যালারিতে পানি পড়ে বললেন দায়িত্বরত এক কর্মী। গ্যালারিগুলো ধুলাবালিতে অপরিচ্ছন্ন। দেখে মনে হয় দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হয়নি কক্ষগুলোর গ্যালারিসহ প্রদর্শিত উপকরণ। কোন কোন আলোকচিত্র ছিঁড়ে পড়েছে গ্যালারির ভিতরে। অযত্ন-অবহেলায় বিবর্ণ হয়ে পড়েছে জাদুঘরে সংরক্ষিত সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলো।

তাছাড়া, জাদুঘরে জায়গা স্বল্পতার কারণে সংগৃহীত অধিকাংশ নিদর্শন গ্যালারিতে প্রদর্শন করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে, প্রায় তিন হাজার নিদর্শন গ্রন্থাগারের পাশের স্টোরে রাখা হয়েছে । কিন্তু সেখানেও যথেষ্ট অবহেলার ছাপ দেখা গেছে। ধুলাবালি জমে নষ্ট হওয়ার পথে এসব নিদর্শন। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে অল্প সংখ্যক দর্শনার্থীকে দেখাগেছে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, রোববার ছাড়া সপ্তাহের ৬দিনই খোলা থাকে জাদুঘরটি। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শনার্থী আসে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছকে এক দর্শনার্থী বলেন, এই ডিজিটাল যুগে এসেও জাদুঘরের আধুনিকায়ন নেই।

পর্যাপ্ত লাইট, ফ্যান বা আলো-বাতাস নেই। নেই আসবাবপত্রে নতুনত্ব।তবে প্রায় ৬০ বছর আগে স্থাপিত ঐতিহাসিক এ জাদুঘরটি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে আজও অজানা পড়ে আছে। ছোঁয়া লাগেনি আধুনিকতার। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটির এখন অত্যন্ত বেহাল অবস্থা।

জাদুঘরের উপ-পরিচালক মো. আমিরুজ্জামান জাদুঘরের মূল ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবেই কোন কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া লোকবলেরও সংকট রয়েছে। ফিল্ড অফিসারের পদ শূন্য থাকায় বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে উপকরণ বা নিদর্শন সংগ্রহের কাজ করা যাচ্ছে না। সহকারী পরিচালকের পদও শূন্য। কুমিল্লা আঞ্চলিক অফিস থেকে মেরামত-সংস্কারের কাজ করা হয়। টিকেট বিক্রির টাকাগুলোও রাজস্ব তহবিলে জমা দিতে হয়। ফলে জরুরি মেরামত কাজের জন্যও আঞ্চলিক অফিসের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।

পর্যবেক্ষকমহল বলছেন, কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে জাদুঘরটি দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত করা সম্ভব। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বেহাল দশার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাব ও লোকবল সংকটকে দুষছেন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাপন, সাংস্কৃতিক আচার, ঐতিহ্যের নমুনা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ১৯৬৫ সালে নির্মিত জাদুঘরটি ১৯৭৪ সালে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়। বর্তমানে জাদুঘরটিতে বাংলাদেশের ২৩টি জাতিগোষ্ঠীর পাশাপাশি পাকিস্তানের কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর নিদর্শন রয়েছে। বাঙালি জাতিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাপন, সাংস্কৃতিক আচার, পোশাক, অলংকারের নিদর্শন রয়েছে এতে। আলোকচিত্র, মডেল, নমুনার মাধ্যমে

জাতিগোষ্ঠীগুলোর নিজস্বতা তুলে ধরা হয়েছে। জাদুঘরের কর্মকর্তারা জানান, ভারতের কয়েকটি জাতিগোষ্ঠী, জার্মানির বার্লিন প্রাচীরের টুকরো, কিরগিজস্তান, অস্ট্রেলিয়া জাতিগোষ্ঠীর কিছু নিদর্শনও রয়েছে। এক দশমিক ৩৭ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটিতে মোট ১১টি কক্ষ রয়েছে। এক নম্বর গ্যালারির প্রথম কক্ষে রয়েছে বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, জীবনযাপনের বিভিন্ন চিত্র ও নমুনা। দ্বিতীয় কক্ষে উপস্থাপন করা আছে পাকিস্তানের পাঠান, পাঞ্জাবসহ চারটি জাতির পোশাক, হস্তশিল্প, অস্ত্র, বাদ্যযন্ত্রের নমুনা। জাদুঘরের কেন্দ্রীয় গ্যালারিতে রয়েছে বিভিন্ন জাতির ব্যবহৃত অলংকারের নিদর্শন।
বাকি কক্ষগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীকে তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ৩ হাজার ২০০ এর মতো নিদর্শন আছে জাদুঘরটিতে। তবে, সরকারি গেজেটে তালিকাভুক্ত প্রায় অর্ধেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধিত্ব এখানে নেই। চারটি গ্যালারিসহ ১১টি কক্ষ বিশিষ্ট জাদুঘরের প্রদর্শনীগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টিসহ দেশের ২৬টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনধারা ও সংস্কৃতি তুলে ধরে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো হলো: চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, চাক, তংচঙ্গ্যা, মুরং, খুমি, গারো, বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, মনিপুরী, খাসিয়া, ওরাওঁ, হাজং, মান্দাই, ডলু, হোদি, বোনা, পোলিয়া, কোচ, রাজবংশী, সাঁওতাল, মুন্ডা ও হো।

জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ১২টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী জাতিসত্তার বসবাস। অথচ জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘরের সাথে পার্বত্যাঞ্চলের মানুষও পরিচিত নয়। খাগড়াছড়ির ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক জীতেন চাকমা বলেন, একই মন্ত্রণালয়ের হলেও জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সাথে তাদের তেমন কোন যোগাযোগ নেই। অথচ প্রতিষ্ঠান দুটির সমন্বয় বা সম্পর্ক থাকলে জাদুঘর অনেক সমৃদ্ধ হতো।

বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা সুরেশ মোহন ত্রিপুরা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলতে প্রচার প্রচারণার প্রয়োজন। এছাড়া জাদুঘরটিতে যেসব নিদর্শন রয়েছে বছরের পর বছর ধরে একইভাবে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
এদিকে, জাদুঘরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মং বা মান রাজ পরিবারের কোন তথ্য বা উপকরণ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মং রাজ পরিবারের সদস্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কুমার সুইচিং প্রু। তিনি বলেন, মং রাজ পরিবারের কিছুই সংগ্রহে রাখা হয়নি জাদুঘরে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালে জাদুঘরটির প্রদর্শনী উন্নয়ন, সংগ্রহ বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। ঐ প্রকল্পের আওতায় একটি টিকিট কাউন্টার ও একটি স্যুভেনির শপ (দোকান) নির্মাণ করা হয়। জাদুঘরের ছাদ সংস্কার, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা সংযোজন ও একটি বড় জেনারেটর কেনা হয়। এ ছাড়া একটি দোতলা অফিস ভবন ও ডরমিটরি নির্মাণ করা হয়। সূত্র জানায়, মূল ভবনের বড় ধরনের কোন মেরামত কাজ হয়নি। অথচ ভবনটির মেরামত অত্যন্ত জরুরি।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

পদক্ষেপ বাংলাদেশ এর বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত ।

পদক্ষেপ বাংলাদেশ-এর আয়োজন, কর্মসূচী ব্যতিক্রম ও বৈচিত্র্যময়। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকার পরিবাগস্থ সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের উন্মুক্ত মঞ্চে জাতীয় সংগঠন ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ১ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সাংস্কৃতিক পর্ব—দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে : শিল্পবৃত্ত, পদক্ষেপ বাংলাদেশ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে : কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, শিল্পবৃত্ত, ঢাকা স্বরকল্পন, মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি করেন : মীর বরকত, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন : গোবিন্দলাল সরকার, মো: তাজুল ইসলাম, খাইরুল আলম।

উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন আবৃত্তিশিল্পী মীর বরকত, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জেবুন্নেসা জেবা, উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষক সবিতা সাহা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পদক্ষেপ বাংলাদেশ-এর সভাপতি বাদল চৌধুরী। স্বাগব বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল্লাহ সাঈদ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মতিয়ারা মুক্তা।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়- বহু ত্যাগ, সংগ্রাম আর প্রত্যাশার ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ শুধু পতাকা আর জাতীয় সঙ্গীত বদল নয়, খোল-নলচে সব পাল্টে নতুন এক আদর্শকে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নের নবযাত্রা। এই স্বপ্নের প্রধান এবং একমাত্র উপজীব্য মানুষ। মানুষের কল্যাণ, মানুষের মুক্তি, মানুষের মর্যাদা এবং মানুষের স্বাধীন ভূমিই শেষ কথা। কত মাতা, কত ভগ্নি, কত জানা-অজানা নারী তাঁর সম্ভ্রম হারিয়েছে শুধু এই মানুষকে মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। মানুষ কল্পনাবিলাসী কিন্তু নিজেতো সে কাল্পনিক নয়Ñএ ভূমিতেই তার সৃষ্টি, বেড়ে ওঠা, ভালো-মন্দের স্বাদ নেয়া, অতঃপর ভূমিতেই মিলিয়ে যাওয়া। এ ভূমির প্রতি তার প্রচ- ভালোবাসা।

মাতৃক্রোড়ে যেমনিভাবে শিশু বেড়ে ওঠে; একইভাবে কাদা-মাটি গায়ে মেখে আলো-বাতাসে অবগাহন করে এই ভূমিকেই মাতৃক্রোড় ভেবে একদিন চিরবিদায় নেয় প্রতিটি মানবশিশু। জন্ম আর মৃত্যুতে যে ভূমিকে কখনো আলাদা করা যায় নাÑতারই অমার্যাদা করবে ভিনদেশী তস্কর! তা কি করে মেনে নেয় ধুলো-বালি গায়ে মেখে বেড়ে ওঠা এ জনপদের মানুষেরা। এ ভূমিরই সাহসী-ত্যাগী- পোড়খাওয়া এক নামÑশেখ মুজিব। মাটি আর মানুষের সাথে ছিলো যাঁর আজন্ম সখ্য, ভিনদেশী হায়েনার হিংস্র থাবায় বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তাঁর হৃদপি-; তবুও ভূমি আর মানুষের স্বাধীনতায় অবিচল থেকেছেন তিনি।

তাঁরই অঙ্গুলী হেলনে সাড়ে সাত কোটি মানুষ পরিণত হয়েছে এক একজন নেতাজী সুভাষ বসু, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, তিতুমীর, বাঘাযতিন, লক্ষ্মীবাই, ভগৎসিং, রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, সালাউদ্দিন, বরকত, আসাদ, মনুমিয়া’য়। এ গাঙ্গেয় বদ্বীপের তেরোশত নদীর জোয়ার আর পাখিদের কলতানে উচ্চারিত হয়েছে ভিনদেশী হায়েনার বিনাশ- ধ্বনি। লাঙলের ফলা থেকে তৈরি উর্বর মাটির প্রতিটি চাকা পরিণত হয়েছে শত্রুবিনাশী আনবিক বোমায়। বাঁশঝাড় উজাড় করে তৈরি হয়েছে চকচকে বেয়নেট।

নিঃশঙ্ক চিত্তে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সঞ্চারিত হয়েছে সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রতিটি রক্ত কণিকায়Ñবিজয় অর্জিত হয়েছে মানুষের সংগ্রাম আর আত্মদানের। বিজয় মাসের সূচনালগ্নে আমরা নতুন করে উদ্দীপ্ত হতে চাইÑমাটি আর মানুষের কল্যাণ কামনায়। আমরা বিনাশ চাই সেই নরপশুদের যারা মাটির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ভিনদেশী হায়েনাদের সঙ্গী হয়েছিলো মনুষত্বের বিনাশ সাধনে। সেই সাথে চাই আজকের এই দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’-এর সরকারি স্বীকৃতি। মাটি আর মানুষের জয় হোক, জয় হোক শুভ চিন্তা আর আদর্শের।

ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা পরিবারের দানে গড়ে উঠছে এতিম শিশু ও নারীর ক্ষমতায়ন কেন্দ্র 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পরিবারের দান করা জমিতে এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে ও নারীর স্কিল ডেভলপমেন্টের জন্য গড়ে উঠছে মির্জা রুহুল আমিন এন্ড ফাতেমা মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের আদর্শ কলোনিতে কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ চলছে। 

 আর কমপ্লেক্সটি বাসমাহ ফাউন্ডেশনের তত্বাবধানে শত শত এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার পাওয়ার ঠিকানা হিসেবে পরিণত হবে। যেখানে এতিম শিশুরা খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকারগুলো বিনামূল্যে নিশ্চিৎ হবে। নারীদের স্কিল ডেভলপমেন্টে কাজ করবে। 

গত এক বছর যাবৎ এ কমপ্লেক্সটির কাজ শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত চার ভাগের তিন ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে শতাধিক এতিম শিশুকে নিয়ে কমপ্লেক্সটিতে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিৎ করেছেন  কমপ্লেক্সে দায়িত্বে থাকা  বাসমাহ অরফানস হোম এর এডুকেশন ইনচার্জ আহম্মেদ আমিন।

তিনি আরও জানান, এই কমপ্লেক্সে বাসমাহ অরফানস হোম, বাসমাহ স্কুল এন্ড কালচারাল সেন্টার এবং বাসমাহ ওমেন্স এন্ড স্কিল ডেভলপমেন্ট সেন্টার হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ। এক কক্ষে চলছিলো একটি দোয়ার আয়োজন। জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও দেশের মঙ্গল কামনায় মির্জা পরিবারের উদ্যোগে এতিম শিশুদের নিয়ে এ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। 

ঠাকুরগাঁওয়ে এতিম শিশুদের মৌলিক অধিকার  ও নারীদের ডেভলপমেন্টের জন্য এমন একটি উদ্যোগকে বাস্তবায়নের পেছনের ব্যপারে জানতে চাইলে অরফান হোম এর এডুকেশন ইনচার্জ বলেন, আমাদের বাসমাহ ঠাকুরগাঁও সহ সারা দেশে পাঁচটি শাখা আছে। নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁর একটি শাখাতে মির্জা ফখরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যগণ পরিদর্শন করেন।  আমাদের কার্যক্রেম তাদের ভালো লাগে এবং এতিম শিশুদের জন্য এমন উদ্যোগ ঠাকুরগাঁওয়ে বাস্তবায়নের জন্য তারা উৎসাহ প্রকাশ করেন এবং ৭৫ শতক জমি এতিমদের জন্য দান করেন৷ এই কর্মকর্তা বলেন বাসমাহ’র  সমস্ত পক্রিয়া মেনেই এটি গড়ে উঠছে।

বাসমাহর সিইও মীর সাখাওয়াত হোসাইন এর বরাতে প্রতিষ্ঠানটির এডুকেশন ইনচার্জ আরও বলেন  বাসমাহ ফাউন্ডেশনের তত্ত্ববধানে সারা দেশ জুড়ে সেবামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে ।বাসমাহ স্কুল এন্ড কালচারাল সেন্টার,বাসমাহ ওরফান্স হোম,বাসমাহ উইমমেন্স স্কিল এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার।এ ছাড়াও শীতকালীন শীত বস্ত্র বিতরণ,কুরবানি প্রোগ্রাম,ইফতার প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ