আজঃ শুক্রবার ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

বোয়ালখালীতে মাঠ জুড়ে শীতকালীন সবজি।

এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে মাঠ জুড়েই এখন শোভা পাচ্ছে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, বেগুন, মুলা, সরিষা, টমেটা, পালংশাক, কপিশাক, লালশাকসহ রকমারি শীতকালীন শাক সবজি।

তবে ফুলকপি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক চাষিরা৷ অল্প সময়ে অধিক লাভের জন্য অনেকেই করেছেন ফুলকপি চাষ। বর্তমান বাজারে ফুলকপির ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। উপজেলার কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন বিভিন্ন সবজিতে মাঠ ভরে গেছে।

এসব ফসল পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক কৃষাণীরা। ভোরে কোদাল, নিড়ানি, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন ক্ষেত পরিচর্যায়। বিকেল অবধি মাঠে থেকে সবাই বাড়ি ফিরছেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ২৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ২০ হেক্টরে বাঁধাকপি চাষ করেছেন কৃষকেরা। সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে বাজারে শীতকালীন সবজি উঠলে ও এবার কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে মৌসুমের শুরুতেই সবজি বাজারে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র দে।

তিনি বলেন, চাষিরা এখন জমি থেকে ফুলকপি তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। তাদের উৎপাদিত ফুলকপি স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ বছরে ফুলকপির বাম্পার ফলন ও ন্যায্য দাম পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন চাষিরা। কেউ অল্প অল্প করে ফুলকপি বাজারে বিক্রি করছেন। কেউ আবার চুক্তি ভিত্তিতে ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

খরণদ্বীপ এলাকার কৃষক রূপক দে বলেন, এবার অক্টোব মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৩৮ শতক জমিতে আগাম মন্টিন (জাপানি) জাতের ফুলকপি লাগিয়েছেন তিনি। সাথী ফসল হিসেবে লাগানো হয়েছে কোরিয়ান জাতের মিষ্টি কুমড়া । এক মাসের মধ্যে ফলন আসবে বলে জানান তিনি। সবকিছু মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমির সব ফুলকপি পাইকারি ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। খরচ বাদে আড়াই মাসে ৫৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

আর ১০-১৫ দিন পর বিক্রির উপযুক্ত হবে হাইব্রিড স্নো-বক্স জাতের ফুলকপি ও এটলাস-৭০, এবং গ্লোরী- ১ জাতের বাঁধাকপি। এরপর আসবে স্নো-ওয়াইট জাতের ফুলকপি। যা মৌসুমের শুরু, মাঝামাঝি ও শেষ সময়ে বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যাবে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে খরচ বাদে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।ফুলকপি বিক্রি করে আবার অন্য ফসল লাগানো হবে বলে জানান তিনি।

ফুল কপি চাষে লাভবান হওয়ার কথা জানিয়েছেন একই এলাকার কৃষক সুবল দে, ঝুন্টু দে, করলডেঙ্গা কৃষক আব্দুল হালিম, মো জামাল উদ্দিন, জৈষ্টপুরা গ্রামের কৃষক মো ইছাকসহ অনকেই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো শাহানুর ইসলাম বলেন বোয়ালখালীতে এবার শীতকালীন ২৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড মন্টিন ( জাপানি), স্নো বক্স, স্নো ওয়াইড, ওয়াইড কুইন জাতের ফুলকপি চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ অঞ্চলের মানুষ আধুনিক সবজি চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এছাড়া কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহারে ও কীটনাশক নিয়ন্ত্রণে পরামর্শ প্রদানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠে রয়েছেন। চাষিরা শীতকালীন ফুলকপি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। তারা ফুলকপি চাষ করে দাম ও ফলন দুটোই ভালো পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

‎উল্লাপাড়ায় বিনামূল্যে ৯ শত জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

‎সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৯ শত জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বোরো সুপার হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৫–২৬ অর্থবছরে উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রবি মৌসুমে এই বীজ বিতরণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

বুধবার ১৭  ডিসেম্বর উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষকদের হাতে বীজের প্যাকেট তুলে দিয়ে কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বগুড়া অঞ্চল, বগুড়া। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা শারমিন আক্তার রিমার সভাপতিত্বে ‎বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম মনজুরে মাওলা। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক  কৃষকরা। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে ,চলতি মৌসুমে উল্লাপাড়া উপজেলায় মোট ৯ শত জন কৃষকের মাঝে ২ কেজি করে SL- 8H বোরো হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

কুল ( বড়ই) চাষে দুই ভাইয়ের ভাগ্য বদল

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

চট্টগ্রামে বোয়ালখালীর সারোয়াতলী খিতাপচর গ্রামের মাটির পথ ধরে এগোতেই চোখে পড়ে সারি সারি সবুজ গাছ। গাছে গাছে ঝুলছে থোকা থোকা কুল। বাতাসে দুলছে ডালপালা, আর সেই সঙ্গে দুলছে দুই তরুণ ভাইয়ের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।

এই গ্রামেই বাবার ফেলে রাখা অনাবাদি জমিকে আঁকড়ে ধরে নতুন পথ স্বপ্ন খুঁজে নিয়েছেন তানভিরুল হক ইমন ও সাইদুল হক তুহিন। চাকরির পেছনে না ছুটে তারা উদোগ্তাকে বেছে নিয়েছেন মাটি আর গাছের সঙ্গে।

২০২০ সালে তখন মাত্র ৭০টি কুল গাছ, বোয়ালখালী কৃষি অফিসের দেওয়া সেই চারা দিয়েই শুরু হয় তাদের বাগানের গল্প। চারদিকে তখন অনেকেই সন্দেহে তাকিয়েছিলেন- পতিত জমিতে ফলের বাগান কতটা সফল হবে?

পাঁচ বছর না যেতেই সেই প্রশ্নের উত্তর মিলছে গাছের ডালে ডালে। এখন তাদের বাগানে কুল গাছের সংখ্যা ৪৬৫টি। বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, কাশ্মীরি ও আপেল কুল চার জাতের কুলে ভরে উঠেছে তিন একর জমি। শুধু কুল নয়, আশপাশে ছড়িয়ে আছে আম, লিচু, পেয়ারা আর মাল্টার বাগান। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে একটি পরিকল্পিত ফলের খামার।


নয় ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে কুল তোলা প্রতিদিন ভোর থেকে দুই ভাইয়ের ব্যস্ততা ঝুড়ি ভরে কুল নামছে গাছ থেকে দিনে বিক্রি হচ্ছে ২৫০থেকে ৩০০ কেজি কুল। প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজারে।

তানভিরুল হক ইমন বলছিলেন, ‘ছাত্র থাকতেই ভাবতাম- বাবার এই জমিগুলো পড়ে থাকবে কেন? কৃষি অফিসে গিয়ে কথা বললাম। ওদের পরামর্শে সাহস পেলাম। প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করি, এখন আল্লাহর রহমতে বাগানটাই আমাদের জীবনের ভরসা।

তিনি জানান, বাইরে থেকে রাসায়নিক সার না কিনে নিজেরাই জৈব সার তৈরি করেন। এতে খরচ কমে, মাটিও ভালো থাকে। এ বছর কুল বাগানে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। অথচ দুই মাসে কুল বিক্রি করে আসতে পারে ১২ লাখ টাকার ও বেশি। এই সাফল্যের গল্পে রয়েছে পরিশ্রমের সময়,শ্রম, আছে ধৈর্য আর বিশ্বাসের শক্তি।


ভাই সাইদুল হক তুহিনের কণ্ঠে শোনা যায় আত্মবিশ্বাস, আমরা দুই ভাই অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু গাছ কখনো বেঈমানি করে না। যত্ন নিলে সে ফিরিয়ে দেয়।
বোয়ালখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহানুর ইসলাম মনে করেন, এই বাগান শুধু দুই ভাইয়ের সাফল্য নয়, এটি একটি উদাহরণ।


তিনি বলেন, এই এলাকায় জোয়ার-ভাটার লবণাক্ত পানির কারণে অনেক জমি অনাবাদি থাকে। সরজন পদ্ধতিতে ফলের বাগান করে পতিত জমি চাষের আওতায় আসে।খিতাপচরের এই বাগান তাই শুধু কুলের গল্প নয়- এটি সম্ভাবনার গল্প। যেখানে মাটির সঙ্গে লেগে থাকা দুই ভাই দেখিয়ে দিচ্ছেন, গ্রামেই লুকিয়ে আছে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ।

আলোচিত খবর

জুলাই সনদ সমর্থন করলে গণভোটে অবশ্যই হ্যাঁ ভোট দিন-প্রধান উপদেষ্টা।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

জুলাই সনদ সমর্থন করলে গণভোটে অবশ্যই হ্যাঁ সমর্থন
দিন-প্রধান উপদেষ্টা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ